দেশে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বিড়ম্বনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৬, ৫:১৭ অপরাহ্ণ
সুরমা ডেস্কঃ
এবার সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে না প্রাথমিক মন্ত্রীর ঘোষণার পর তমা ও তাবিয়া ছুটে যায় গ্রামের বাড়িতে। এবার ঈদের আনন্দের মাত্রা একটু বেশি হবে এমন ধারণা ছিল তাদের। তাই লম্বা ছুটিও নিয়েছিল স্কুল, কোচিংসহ সব জায়গা থেকে। কিন্তু সেই আনন্দ এক সপ্তাহের বেশি টিকলো না। কারণ মন্ত্রীর ঘোষণার ৬ দিন পর সরকারের র্স্বোচ্চ মহল তা বাতিল করে। এতেই তাদের আনন্দের কপালে ভাঁজ পড়ে। তমার মা সায়মা সুলতান বিনার অভিযোগ- একবার বলছে পরীক্ষা হবে না, পরক্ষণেই বলছে হবে। আমার সন্তান এখন কান্নাকাটি করছে। তার অভিযোগ, কোচিং বাণিজ্যকারীদের চাপে সরকার পরীক্ষা বাতিল করতে পারছে না। একই অভিযোগ শিক্ষাবিদদের। তারা বলছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছে। একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মানসিক চাপে পড়ে শিশুরা। এতে শিশুদের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েন অভিভাবকরা।
রাজধানীর কয়েক এলাকার ঘুরে দেখা গেল, মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর সপ্তাহখানেক বন্ধ ছিল কোচিং সেন্টারগুলো। তা বহাল রাখার পরই ফের রমরমা ব্যাচভিত্তিক কোচিং সেন্টারগুলো। কারণ আগামী নভেম্বরে বসতে হবে প্রাথমিক পরীক্ষা টেবিলে। তমা ও তাবিয়ার মতো ৩০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে তাই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় এনজিও মোর্চা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ছোটদের কোনো সিদ্ধান্ত যখন বড়রা নেন, তখন ছোটদের বিষয়টি বড়রা বুঝতে চান না। তার মতে, ছোটদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিলে অবশ্যই তাদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরীক্ষা নিয়ে যা হলো তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আশঙ্কা ও দোদুল্যমানতা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে এই পরীক্ষা বহাল রাখায় কার স্বার্থ উদ্ধার হলো বা কোন গোষ্ঠী লাভবান হলো? নিশ্চয়ই অভিভাবকরা হয়নি। লাভ হয়েছে কোচিং, নোট গাইড-বইওয়ালাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, চলতি বছর থেকে সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। কয়েক দিনের ব্যবধানের দু’রকম সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাচ্চাদের উপর মানসিক চাপ পড়বে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় নীতিনির্ধারকদের ভুলে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ১০-১১ বছরের একজন শিশু পরীক্ষা হবে নাকি হবে না এটি নিয়েই ব্যস্ত। সে সৃজনশীল পড়াশুনা করবে কখন। তাদের মতে, প্রাথমিকের এই পরীক্ষা উঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক জনমত রয়েছে। তারপর তা বহাল রাখা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, পরীক্ষা তো আমরা আগেও নিয়েছি। আমাদের হোক আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক। সব সময় সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সুতরাং পরীক্ষা নিয়ে এত টেনশন করার কিছু নাই। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, সরকার বলছে, সমাপনী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। তারপর বলা যাবে আসলে কী হবে। মানে এটা নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরীক্ষা রেখে দেয়া মানে আরও কিছু দিন কোচিং বাণিজ্যের সুযোগ করে দেয়া। না হয়, সারা দেশে এতো জনমত থাকার পরও কেন এই পরীক্ষা রাখতে হবে? এতে স্পষ্ট কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সরকারের কেউ না কেউ যুক্ত। বড়দের ভুলে ছোটরা কেন কষ্ট করবে। এটা রীতিমতো অপরাধও করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ স্পষ্ট করে বলা আছে, শিক্ষার স্তর হবে তিনটি। প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা। যা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। আর মাধ্যমিক হবে একাদশ পর্যন্ত এরপর উচ্চ শিক্ষা। এছাড়াও গত মাসে সমাপনী পরীক্ষা কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী বলেন, পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের পরীক্ষা হয়নি। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতিসহ কোনো আইনেও এ পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। সুতরাং ২০১৬ সাল থেকে এ পরীক্ষা কেন বাতিল করা হবে না- এ মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। শুধু আদালত নয়, এই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন পর্যন্ত করেছে কয়েকটি অভিভাবক সংগঠন।