সিলেটে নেই রাসায়নিক পরীক্ষাগার, মাথার খুলি কাটতে হাতুড়ি-বাটাল!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ৬:৪৮ অপরাহ্ণ
এ টি এম তুরাব:
ময়নাতদন্তের প্রয়োজনে লাশঘরে মানুষের মাথার খুলি কাটতে এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে হাতুড়ি-বাটাল! ময়না তদন্তের অন্যান্য ক্ষেত্রেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও তেমন নেই। আর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন ও টকসিকোলোজি বিভাগে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা তো দূরের কথা! আলামত সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থাই নেই। সিলেট অঞ্চলে খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা প্রমাণের জন্য ভিসেরা, ডিএনএ পরীক্ষাসহ সব রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠাতে হয়। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে সময় ক্ষেপণের কারণে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রতিদিন গড়ে ৬/৭টি লাশের ময়নাতদন্ত হয়ে থাকে। ময়না তদন্তে প্রাপ্ত নমুনা ছাড়াও আত্মহত্যা, হত্যাকা- ও ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিম থেকে সংগৃহিত ভিসেরা রিপোর্টের জন্য পাঠাতে হয় চট্টগ্রামে। আর শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠাতে হয় ঢাকায়। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রতিবেদন ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানোর ফলে বিচার প্রার্থীরা পড়েন ভোগান্তিতে। এসব দিক বিবেচনায় এনে ওসমানী মেডিকেল কলেজ চত্বরে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিলো। সেখানে যাবতীয় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা এই রাসায়নিক পরীক্ষাগার।
আইনজীবীরা জানান, বিচারের একটি পর্যায়ে এসে বিচার প্রার্থীকে সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। সুতরাং তাকে প্রসেস দিতে হবে, তার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ থাকবে। আর সে যদি না আসেন তাহলে সেই তারিখটা আবার দীর্ঘায়িত হবে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ময়নুল হক বলেন, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এটা চালু হয়নি। তবে, প্রতিটি মেডিকেল কলেজে এই পরীক্ষাগুলো করানোর প্রয়োজনীয়তা কথা বললেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার।
রাসায়নিক পরীক্ষা প্রক্রিয়া : ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ায় ভিকটিমের হৃদপিন্ড, পাকস্থলি, লিভারসহ শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় পর্যায়ে। স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করার পর কিছু অংশ পাঠিয়ে দেয়া হয় ভিসেরা রিপোর্টের জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে কিংবা চট্টগ্রামে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর রিপোর্ট পাঠানো হয় স্থানীয় মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে। এরপর চূড়ান্ত মতামত দেন স্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
যে কারণে মাথার খুলি কাটতে হয় : বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে মৃতের শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। মস্তিষ্কে আঘাত রয়েছে কিনা এবং মাথার অভ্যন্তরে আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা জানতে মাথার খুলি কাটতে হয়। আর ব্রেইন হেমারেজ (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) ঘটেছে কিনা তা পরীক্ষা করার প্রয়োজনে ময়না তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মরদেহের মাথার খুলি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কাটার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
যে কারণে হাতুড়ি-বাটাল : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের দিকে মানুষের মাথার খুলি কাটতে আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে ইলেকট্রিক ‘শ’ (করাত) চালু করা হলেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া শুরুতে অজ্ঞতা নিয়ে এটি ব্যবহার করতে গিয়ে ইলেকট্রিক ‘শ’ ভেঙ্গেও গেছে। তাই এখনও বাটালে হাতুড়ি পিটিয়ে মাথার খুলি কেটে এ পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় দেখা যায়, ময়নাতদন্তের সময়ে মৃতের আত্মীয়-স্বজনরা বাইরে অপেক্ষা করেন। আর লাশকাটা ঘরে হাতুড়ি পিটিয়ে ডোম ঠট ঠট শব্দে কাটতে থাকেন মাথার খুলি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে একটা ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ সঠিকভাবে মাথার খুলি কাটা না হলে এবং খুলি কাটতে গিয়ে ব্রেনে চোট লাগলে পরীক্ষায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।সুত্রঃদৈনিক জালালাবাদ