যে কারণে করোনার শঙ্কা বাড়ছে সিলেটে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২০, ৩:১৬ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
বিশ্বজুড়ে এখন মহামারি করোনার ছোবল। থমকে দাঁড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। বিপুলসংখ্যক স্বজন প্রবাসে থাকার কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করতে পারছেন সিলেটবাসী। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। একের পর এক ভুলের কারণে সিলেটে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। হবিগঞ্জকেও ছাড়িয়ে গেছে সিলেট। বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলা এখন শীর্ষে অবস্থান করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
গড়ে প্রতিদিন এ সংখ্যা ২০-২৫ জনে। ফলে সিলেট জেলায় মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে ৪১ জন। এ কারণে সিলেট বিভাগের করোনার ‘হটস্পট’ বলা হচ্ছে সিলেটকেই। সিলেটে কেনো বাড়ছে করোনা রোগী- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণেই সিলেটের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যে সপ্তাহে যত বেশি সামাজিক দুরত্ব মানা হয়, সে সপ্তাহে রোগির সংখ্যা কম আসে। আর যে সপ্তাহে দোকানপাট অবাধে খোলা হয় সে সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মতে- সিলেটে এখন থেকেই লকডাউন কড়াকড়িভাবে না মানলে সামনে ঘোর বিপদ হতে পারে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- রোববার দুপুর পর্যন্ত সিলেট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১ জন। তার পরের অবস্থান হবিগঞ্জে ১২৯ জন। সিলেটে যখন একজন, দু’জন করে রোগী বাড়ছিলো তখন হবিগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ে রোগীর সংখ্যা। একদিনে ৩০ জনের মতো রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। এর কারণ ছিলো- লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জে এসে ঢুকেছিলো বিপুল সংখ্যা পোশাক ও কারখানা শ্রমিক। তাদের দ্বারাই করোনা সংক্রমিত হয় হবিগঞ্জে। শেষ পর্যন্ত হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকও করোনা আক্রান্ত হন। তবে- হবিগঞ্জের করোনা উর্ধ্বগতি এখন নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এখন নতুন করে আর সেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন না। এভাবে চললে আগামী কিছু দিনের মধ্যে হবিগঞ্জের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। হবিগঞ্জের করোনা যখন নিয়ন্ত্রণে আসছে তখনই সিলেটে বসিয়েছে থাবা। সিলেট জেলার সব উপজেলায়ই এখন করোনা আক্রান্ত। স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানিয়েছেন- সিলেট জেলায় মোট আক্রান্তের মধ্যে অর্ধেকই হচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মী ও পুলিশ সদস্য। সংখ্যা হবে অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ৪০ জনের উপরে রয়েছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মী। তাদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে ফের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। আর সিলেটে ১০ জন পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালগুলো করোনার ‘হটজোন’ হিসেবে পরিনত হচ্ছে। রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আবার অনেক রোগি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়ে অন্যদের সংক্রমিত করেছেন। গোলাপগঞ্জের টিকরপাড়ার বয়োবৃদ্ধ এক রোগী সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। ঘটনাটি ৫ দিন আগের। তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের ১৩ সদস্যর করোনা পরীক্ষা করেন। শনিবার মধ্যরাতে পাওয়া রিপোর্টে সবার করোনা পজিটিভ মিলেছে। এরপর থেকে গোটা টিকরপাড়া লকডাউন করে দেয় প্রশাসন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ওই বাড়ির লোকজন সামাজিকভাবে সবার সঙ্গে মিশেছে। এমনকি তারা মসজিদেও জামাতে নামাজ আদায় করেছে। ফলে তাদের নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এই মূহূর্তে সিলেটে কেন এই পরিস্থিতি প্রশ্নের উত্তর জানাতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগতত্ব ও নিয়ন্ত্রণ) আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- সত্য কথা হচ্ছে সিলেটে লকডাউন মানা হচ্ছে। দোকানপাট খোলা রেখে রাস্তায় মানুষ নেমে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। এ কারনে সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তিনি জানান- করোনার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হলে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। লকডাউন মানতেই হবে। কিন্তু কেউ তো কারো কথা শুনছে না। এজন্য সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি কঠোর হওয়ার আহবান জানান তিনি। সিলেটের পুলিশ বাহিনীতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ সংখ্যা প্রায় ১০ জন। এর মধ্যে বিশ্বনাথ থানায় একদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন চার পুলিশ সদস্য। সিলেট মহানগর পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্টও আক্রান্ত হয়েছেন। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন- এখন পর্যন্ত যেসব পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সুস্থ রয়েছেন। তাদের পাশে রয়েছে গোটা পুলিশ বিভাগ। সিলেট জেলা এসপি ফরিদ উদ্দিন সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সব সময় তাদের তদারকি করছেন। তিনি জানান- আক্রান্তের সংখ্যা কম রাখতে সচেতন করা হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
সিলেটে করোনা রোগী ৪০০: সিলেট বিভাগে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ৪০০ তে পৌছেছে। খুব দ্রুত এই সংখ্যা বাড়ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন করে নতুন আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গোলাপগঞ্জে এক বাড়িতে ১৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- লকডাউন না মানার কারনেই এমন ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্য বিভাগের রোববারের সর্বশেষ বুলেটিনে জানা গেছে- সিলেট বিভাগে করোনা ভাইরাসে সর্বমোট আক্রান্ত ৪০০। ২৪ ঘণ্টায় রোগী বেড়েছে ৪১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট- ১৪১ জন, সুনামগঞ্জ- ৬৯ জন, হবিগঞ্জ- ১২৯ জন ও মৌলভীবাজার- ৬১জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন- ৬ জন, সুস্থ ৮২ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন- ১৪৫ জন। সিলেট বিভাগে মোট কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন- ১০০১ জন। এর মধ্যে সিলেটে ২৭২ জন, সুনামগঞ্জে ২১৮ জন, হবিগঞ্জে ২৬৯ জন ও মৌলভীবাজারে ৩৪২ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন রয়েছেন ৮৫ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৬০ জন।