মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরা নীরব, কেবল ভরসা সরকারি ত্রাণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২০, ৪:২৮ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
ভয়াবহ করোনাভাইরাসের সংক্রমনের আতঙ্কে সারা দেশ এখন স্তবির। বৃহস্পতিবার (২এপ্রিল) মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ ফাকা। কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাজার হাজার কর্মহীন মানুষের জীবনের কাটাতো থেমে নেই। তিনবেলা না হলেও দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগার করা দু:সাধ্য হয়ে ওঠেছে তাদের পক্ষে।
কথা হলো, জুড়ি উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিলীপ, সুনীল টুনুর সাথে কিভাবে চলছে জীবন? জিঞ্জেস করতেই ছলোছলো চোখে বললেন, ‘আজ ১৮ দিন থেকে দোকান বন্ধ। ১৮-২০ জনের সংসারে ঘরে যা সঞ্চয় ছিলো তা ফুরিয়ে গেছে, কি খাব, কতদিন এভাবে চলবো ভেবে রাতে ঘুম আসেনা। চেয়ারম্যান, মেম্বার, প্রশাসন করো কাছে সাহায্য চাইতে পারিনা লজ্জায়। কিন্তু পেটের খিদাতো ভাই লজ্জা বুঝেনা। করোনায় মরার আগে তো না খেয়েই মারা যাবো।’ এ অবস্থা অধিকাংশ স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর। না চাইতে পারে খাদ্য সাহায্য, না বলতে পারে নিজেদের কষ্টের কথা। তাদের না বলা ভাষা বুঝার মতো কোন জনপ্রতিনিধি নেই এ দু:সময়ে এই মানুষগুলোর পাশে।
মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার অধিকাংশ এম পি, নেই তাদের নিজ এলাকায়। উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানগন সঠিক খোঁজ নিচ্ছেন না তাদের- এ অভিযোগ ভোক্তভোগীদের। প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি যে খাদ্য সহায়তা আসছে তা প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য।
জেলায় শ্রমজীবি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানান পেশায় নিয়োজিত প্রায় ৫-৭ লাখ মানুষ দু সপ্তাহের অধিক সময় কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু এসব কর্মহীন মানুষের পাশে কিছু জনপ্রতিনিধি ছাড়া কেউ নেই। করোনা সংক্রমনের ভয়ে সবাই নিরব। অসহায় লোকজন সরকারি ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় আছেন। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দিলেও তা অতি নগন্য।
জনপ্রতিনিধি ও ধনী ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ভাবে কোন সহযোগিতার হাত প্রসারিত করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু মাত্র সরকারি বরাদ্ধের ত্রাণ বিতরণ করে বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলে সামাজিক সংগঠনের নেতারা মনে করেন। জনগণের এই দু:সময়ে স্ব-স্ব এলাকার সর্বস্তরের জন প্রতিনিধিদের নীরবতায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১মার্চ পর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলায় বিশ হাজার পরিবারের মধ্যে ২শত মে.টন খাদ্য সহায়তা ও নগদ এগার লাখ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।