সিলেটের লালাখাল : যেন একটি স্বচ্ছ পানির ‘নীল নদ’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৩:৫৩ অপরাহ্ণ
নাজমুল ইসলাম:
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল যেন একটি ‘নীল নদ, স্বচ্ছ পানিতে নীল আকাশের রং, দু’পাশে পাথুরে টিলা আর সবুজ বন, অনতিদূরে ভারতের মেঘমাখা আকাশছোঁয়া পাহাড়। পাহাড় আর টিলার ঢালুতে বিস্তৃত চা গাছের মায়াবী বাগান যেন নিসর্গকে করেছে আরো বেশি ব্যঞ্জনাময়।
এপার ওপার দিয়ে বিনে সুতোর মালা গাঁথছে ছোট্ট নৌকাগুলো। লোকজন আসে, প্রাণ ভরে দেখে আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে পুনরায় দেখার আকুতি নিয়ে চলে যায় আপন গন্তব্যে। প্রকৃতির তারিফ করা তাদের গল্প আর ছবিগুলো কেবলই ডানা মেলে, অনুপ্রাণিত করে দেশ বিদেশের মানুষদের। প্রলুদ্ধ হয়ে আরও বেশি দর্শক আসে, এভাবে মানুষের আনাগোণা কেবলই বাড়তে থাকে রূপের রাণী লালাখালে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রকৃতির এক অপরূপ দান লালাখাল। প্রকৃতি তার আপন হাতে পরম যতনে রূপ সৌন্দর্য্যরে সবটুকু দিয়ে সাজিয়েছে এ স্থানটিকে। পাহাড়-টিলা-অরণ্য আর নদী যেন ব্যতিক্রমি মিতালি পাতিয়েছে এখানে। সারী নদী লালাখালের প্রাণ। ভারতের জৈন্তা পার্বত্য জেলার মিহ মাইথ্রু নামক স্থান থেকে উৎপত্তি লাভ করে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে লামু ও উমসিয়ারাং নদীকে সঙ্গী করে এটি বাংলাদেশে লালাখাল দিয়ে প্রবেশ করেছে। প্রাচীনকালের কোনো এক সময়ে রূপের টানে দুর্গম পাহাড়ী দুরাঞ্চল হতে ছুটে এসেছে সারী, মিলিত হয়েছে লালাখালে, নিজের পাতানো মিতালিকে সে যেন করেছে আরও নিখুঁত আর আকর্ষণীয়।
লালাখাল হতে সারী নদী ক্রমশ: চলে এসেছে পশ্চিম দিকে, সিলেট তামাবিল সড়ক ভেদ করে গোয়াইন নাম ধারণ করে অগনিত জনপদ মাড়িয়ে সে ছুটে গেছে সাগরের পাণে। লালাখাল হতে সে একাই আসেনি, যেন সঙ্গী করে নিয়ে এসেছে রূপের ঢালি। আকাশের নীল রং নিজের মধ্যে ধারণ করে সে নিজেকে অপ্সরী করে ক্ষান্ত হয়নি, চলতি পথে সর্বত্রই সে মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। তাই আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরাও তার রূপ সৌন্দর্য উপলব্ধির জন্য নদী ভ্রমণে বের হন। সারিঘাট হতে নৌকা ভ্রমণ করে তারা চলে যান লালাখালে। প্রাণজুড়ানো সে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যার আছে, কেবল সেই বলতে পারবে কত উপভোগ্য সে ভ্রমণ! প্রকৃতির রূপ অরূপের মতো নতুন রূপে ধরা দেয় দর্শনার্থীদের মনে।
সিলেট থেকে জাফলং বা গোয়াইনঘাটগামী বাসে চেপে সারিঘাট যেতে সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে নদী পথে দেখে আসতে পারেন লালাখাল। বিকল্প হিসেবে সারিঘাট থেকে অটোরিকশা কিংবা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে সরাসরি ঢুপি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলে যাওয়া সড়কে পাখিবিল কামরাঙ্গী হয়ে যেতে পারেন লালাখাল। সেখানে আছে রিসোর্ট, অত্যাধুনিক রেস্তোরা। জাফলং যাওয়ার পথে সহজেই এ উপভোগ্য স্থানটি দেখে আসা যায়।
অপরদিকে, সারিঘাট পর্যটক বহনকারী নৌকা শ্রমিক সংগঠনের সেক্রেটারি হারিছ উদ্দিন জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে পর্যটকদের সুবিধার্থে ৩৫/৪০ টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং প্রতিটি নৌকায় ৫টি করে লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়েছে। প্রতি নৌকায় ১০ জন করে যাত্রী বহন করা হবে ও ৩ ঘন্টার জন্য ভাড়া নির্ধারণন করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা করে।-একাত্তরের কথা