ওসমানীনগরে সংবর্ধনা, বালাগঞ্জে বরণ : বিশ্বজয়ী সাকিবের খবর জানে না সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৬:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের বালাগঞ্জের সন্তান সাকিব বিশ্বজয় করে প্রথমবারের মতো সিলেটের মাটিতে পা রাখলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাকিব সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে সেখানে এক আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়। যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে ধরাশায়ী করতে অনন্য রয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ক্রিকেটারের।
বিমানবন্দরে সাকিবকে বরণ করতে সেখানে যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী, সাকিবের বাবা গৌছ আলী, মা সেলিনা পারভিন শেলী, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্ত-সমর্থকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ। এসময় তারা সাকিবকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বিমানবন্দর থেকে সাকিব সিলেট নগরীর পীরমহলাস্থা তার চাচার বাসায় যান। স্বজনরা সেখানে তাকে নিয়ে কেক কাটেন এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সাকিবের কৃতিত্বে সবাই উদ্বেলিত। পরিবার, স্বজন, বন্ধু-শুভাকাক্সক্ষীসহ পুরো সিলেটবাসী আবেগতাড়িত।
কিন্তু সাকিব সিলেটে আসার আনন্দঘন এই মুহূর্তে সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব, কোনো ক্রীড়া সংস্থা বা সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের কাউকেই দেখা যায়নি বিমানবন্দর বা কোনো অনুষ্ঠানে। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ব্যথিত হয়েছেন সাকিবের মা-বাবাও। বিমানবন্দরে তারা সাংবাদিকদের বলেন, সাকিব এখন শুধু আমাদের বা বালাগঞ্জের গর্ব না, পুরো সিলেটবাসীর রত্ন। তাকে বরণ করে নিতে সিলেটের কোনো ক্রীড়া সংস্থা বা ক্রিকেট সংগঠনের কেউ বিমানবন্দরে না আসায় আমরা হতাশ হয়েছি। এছাড়া সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী বা ক্রীড়াব্যক্তিত্বরা যদি আজ সাকিবকে বরণ আসতেন শুভেচ্ছা জানাতেন তাহলে সাকিবসহ সিলেটের প্রতিভাবান তরুণ-কিশোর ক্রিকেটাররা উৎসাহিত হতেন বলে সাকিবের সমর্থকের মধ্যে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম নাচন সাংবাদিকদের বলেন, সাকিব সিলেটে আসার বিষয়টি আমরা জানি না। তাছাড়া সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশন তো ছোট সংগঠন। যারা বিভাগীয়- জেলা পর্যায়ে আছেন তাদের সেখানে যাওয়া উচিত ছিল বলে আমি করি।
সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল এসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানি না জানলে অবশ্যই যেতাম। তবে সাকিব সিলেটে আসার পর তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তার সুবিধামতো একটা তারিখ জানাতে বলা হয়েছে। সে তারিখ সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।
এদিকে বিশ্বজয়ী তানজিম হাসান সাকিবকে বরণ করে নিতে বালাগঞ্জে দিনব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। তিলকচাঁনপুর গ্রামে সাকিবের বাড়ির আঙ্গিনায় আগ থেকেই বানানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সকাল থেকে বাড়িতে গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় সমর্থকেরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তাজপুর কদমতলায় সাকিবকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সমর্থকেরা জয়ধ্বনী দিয়ে শ্লোগান তুলেন- ‘সাকিবের জন্য- বাংলাদেশ ধন্য, সাকিবের জন্য-বালাগঞ্জ ধন্য।’ তারা সাকিবকে ক্রিকেটাঙ্গণের ‘যুবরাজ’ বলে সম্বোধন করেন। বিকেলে ৫টার দিকে বিশাল গাড়ী বহর ও মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করে সাকিবকে নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে উৎসুক জনতা তাকে অভিবাদন জানান। সাকিবের বাড়ি সংলগ্ন বালাগঞ্জ-তাজপুর সড়ক। সাকিবের জন্য সকাল থেকে গ্রামবাসীর অপেক্ষা। গাড়ী বহর সাকিবের বাড়ি এলাকা অতিক্রম করার সময় সবাই হাত তালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সাকিবের গাড়ী বহর বালাগঞ্জ বাজারে পৌঁছলে সেখানে উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সেক্রেটারী আনহার মিয়া চেয়ারম্যান, বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাকিবের চাচাতো আব্দুল মুনিম, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এরপর সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় সাকিবকে এলাকার সর্বস্থরের মানুষ বরণ করে নিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে সাকিবকে সিলেট শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে ওসমানীনগর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে তাজপুর কদমতলা এলাকায় তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সিলেট বিভাগীয় ধারাভাষ্যকার সংস্থার সভাপতি জুয়েল আহমদ নূরের পরিচালনায় সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দাল মিয়া, বালাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রজত চন্দ্র দাস ভুলন, বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও সাকিবের চাচা আব্দুল মুমিন, ওসমানীনগর সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক চঞ্চল পাল, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক আরুনোদয় পাল ঝলক, শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক জাহেদ আহমেদ সুমন, উপজেলা যুবলীগ নেতা মইন উদ্দিন মোহন প্রমুখ।
অনুভূতি ব্যক্ত করে সাকিব বলেন, আমরা ভারতকে না হারালে বুঝতে পারতাম না দেশের মানুষ ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের এতো ভালোবাসেন। সত্যিই একটি অসাধারণ এক অনুভূতি। প্রত্যেক ক্রিকেটারই চায় নিজের অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দেশের পতাকাকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে। আমারও এমন স্বপ্ন ছিল। আমরা দেশের ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।-একাত্তরের কথা