সুনামগঞ্জে তোফাজ্জল’র মায়ের আহাজারি: ‘কী অপরাধ ছিল আমার মাসুম বাচ্চার’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ৭:২৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
বাড়িতে মানুষের ভীড়। ছেলে হারানোর শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন মা রিয়া বেগম। স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিরা শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন তাকে। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুমরে কাঁদছেন বাবা জুবায়েল মিয়াও। মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার তোফাজ্জল হোসেনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য।
সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে কান্না করতে করতে জুবায়েল মিয়া জানান, আমি দিন মজুর, আমার কী অপরাধ? আমার মাসুম বাচ্চার কী অপরাধ? ঘাতকরা মুক্তিপণের টাকা টাকা চেয়েছিলো। ধারদেনা করে টাকাও জোগাড় করেছিলাম। তারপরও আমার সন্তানকে জীবিত পেলাম না। তারা আমার ছেলেকে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হন নি। তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। দু’ হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কিছুতেই ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না ছোট বোন হুমায়রা। ভাই ফিরে আসবে বলে কান্না করছে সে। তিনি তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চান।
এর আগে শিশু তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার সন্দেহে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাসতলা গ্রামের নিহত শিশুর ফুফা সেজাউল মিয়া (২৫), ফুফু শিউলী বেগম (২১), শিউলীর শুশুর কালন মিয়া (৪৫), চাচা সালমান হোসেন (২২) ও লোকমান হোসেন (২০), পার্শ্ববর্তী বাড়ীর হাবিবুর রহমান (৬৫) তার ছেলে রাসেলকে আটক করে গত রবিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আতিকুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লুঙ্গি ও দু’টি বালিশের কভার জব্দ করা হয়। শিঘ্রই শিশু তোফাজ্জল অপহরণ ও হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান বলেন, খুনিদের কেউ রেহাই পাবে না। শিশু তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দ্রুত সময়ে মধ্যে প্রদান করা হবে। হত্যাকান্ডে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারী বুধবার উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাসতলা গ্রামের জোবায়েল মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় বাঁশতলা দারুল হেদায়েত মাদরাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হোসেনকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে পরদিন স্বজনেরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। শুক্রবার ভোরে বসতঘরে তোফাজ্জলের সেন্ডেল ও একটি চিঠি পান। সেখানে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে শনিবার ভোরে গোয়াল ঘরের পাশে তোফাজ্জলের বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পায় স্বজনরা। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে বাসতলা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।