সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : পানিবন্দী সাড়ে ৪ লাখ মানুষ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০১৭, ৮:৩৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বের মৌলভীবাজার ও সিলেটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির গতকাল সোমবারও উন্নতি হয়নি। দুই জেলায় পানিবন্দী হয়ে আছে সাড়ে চার লাখ লোক। পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে দুই জেলার তিন শতাধিক বিদ্যালয়ে।
গত এপ্রিলে অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে ওই অকালবন্যায় ১৫৪টি হাওরের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। তবে স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, হাওরের ৯০ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মৌলভীবাজারে গতকাল নতুন করে বন্যার পানি বাড়েনি। কিন্তু কুশিয়ারা নদী এবং হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরের পানি না কমায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলার ১৪২টি প্রাথমিক ও ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে।
জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিলেও বিশেষত হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওর এলাকায় এর প্রকোপ বেশি। এখানকার অনেক গ্রামবাসী প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। বড়লেখায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল বলেন, পানি খুব বাড়েনি। তবে বড় সমস্যা যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা। অনেক দিন ধরে রাস্তায় পানি। রাস্তায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ।
জুড়ীতে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কুলাউড়ার ৭০টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এ উপজেলায় আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার ভুকশিমইল ইউপির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ বাড়িঘরে পানি উঠেছে।’
রাজনগর উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার মানুষ। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। পানি ওঠায় অনেকে মাচা বেঁধে কোনো রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এখানে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের দুই কিলোমিটার স্থান তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল। অপর দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১৫-২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।
জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৩টি উপজেলার নয়টিতে অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী। পানি ওঠায় ১৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা। ভারত থেকে নেমে আসা ঢলেই মূলত এ বন্যা দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দী হয়ে পড়ায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। অনেকে ঘরের ভেতরেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
এদিকে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য খোলা ৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। এছাড়া, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য ১শ ৩৭ মেট্রিক চাল এবং ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ১শ’৪৮টি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। বন্ধ রয়েছে ৭টি উপজেলার ১শ ৬১টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। এদিকে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।