সুনামগঞ্জে মুজিবনগর বাজারের নামে কোটি টাকা লোপাট করেন আল আমিন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সরকারি খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার তৈরির নামে এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী) এর বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২১ সালে সরকারি জমিতে ৪শ’ দোকান ভিটির বাজার নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেন আল আমিন চৌধুরী। এ প্রেক্ষিতে ওইসময়ে আল আমিন চৌধুরী তার নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে নিজ বাড়িতে এক মিটিং করেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে গুচ্ছভাবে ১শ’ ৫টি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের মাধ্যমে মুজিবনগর গ্রামের সূত্রপাত হয়। তারই দক্ষিণ পাশের সরকারি খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ওই মিটিংয়ে। তবে মিটিংয়ের কোনো লিখিত রেজ্যুলেশন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই মিটিংয়ে আল আমিন চৌধুরী তার নিজস্ব ও প্রভাবশালী লোকজনের সমন্বয়ে বাজার নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি মৌখিক কমিটিও তৈরি করেন এবং এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রতি দোকান ভিটির বিপরীতে ৩০ হাজার টাকা হারে উত্তোলনের দায়িত্ব দেন ওই কমিটিকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীহাইল গ্রামের বাসিন্দা কুখ্যাত খুনি ও আল আমিন চৌধুরীর ডানহাত আফজাল মিয়া, জুবায়ের আহমেদ ডালিম, জিয়া মেম্বার, হেকমত মিয়া, অরূপ মিয়া ও ইছাকপুর গ্রামের আশাদুল মিয়ার মাধ্যমে শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম তথা আশেপাশের উপজেলার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ৪শ’ দোকান ভিটির বিপরীতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ৪ বছরেও মুজিবনগর বাজারের কোনো দর্শনীয় কার্যক্রম না হওয়ায় টাকা দেয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে। এ বিষয়ে মুজিবনগর বাজার কমিটির সদস্য আফজল মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা চৌধুরী সাবের কথামতো এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা উঠিয়েছি। তবে আমি যে টাকা উঠিয়েছি, তার সব টাকাই আমি চৌধুরী সাবকে দিয়েছি। কত জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রসিদ দেখে বলতে হবে ভাই। যাদের কাছ থেকে টাকা এনেছি, তাদেরকে রসিদ দিয়েছি বলে জানিয়েছেন তিনি। মুজিবনগর বাজারে কতটি ভিটি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪শ’ ভিটি হবে ভাই।
কমিটির অন্যতম সদস্য জুবায়ের আহমেদ ডালিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ৪৯ জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছি। আল আমিন সাহেবের নির্দেশে কিছু টাকার মাটি কাটিয়েছি এবং বাকি টাকা আল আমিন সাহেবকে দিয়েছি। বাজার কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না, আল আমিন সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। অনুরূপভাবে অরূপ মিয়া, জিয়া মেম্বার ও হেকমত মিয়া জানান- তারাও টাকা উত্তোলন করে আল আমিন চৌধুরীকে দিয়েছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, চৌধুরী সাহেবের কথায় বাজারের নামে টাকা উঠিয়ে তারাও বিপাকে পড়েছেন। লোকজনকে দিতে পারছেন না দোকান ভিটি, ফিরিয়ে দিতে পারছেন না টাকাও।
গত ৫ই আগস্টের পর থেকে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এলাকায় না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করেও তার ব্যবহৃত হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো প্রতিউত্তর না পাওয়ায় তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টা আমার পিরিয়ডে নয়, তবে আমি শুনেছি, শ্রীহাইল গ্রামের আল আমিন চৌধুরী ও তার লোকজন মুজিবনগরের কাছে একটি বাজার করবে বলে বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে অনেক টাকা উত্তোলন করেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে বাজার হবে না। তাই আমি মনে করি এলাকার লোকজনের কাছ থেকে যে বা যারাই দোকান ভিটি দেয়ার কথা বলে টাকা উঠিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দিক। অন্যথায় ভবিষ্যতে এলাকায় এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটবে।