হবিগঞ্জে ভগ্নিপতি এমপি জাহিরের আশীর্বাদে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শ্যালক বশির
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
ক্ষমতার দাপটে গাড়ির স্ট্যান্ড দখল, টেন্ডারবাজি, বালু মহাল দখলসহ এহেন অপকর্ম নেই যা করেননি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান আল বশির। ভগ্নিপতি এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আর বোন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ দাপটেই তটস্থ রাখতেন সবাইকে।
ভগ্নিপতি সাবেক এমপি মো. আবু জাহিরের আশীর্বাদে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন কামরুজ্জামান। দীর্ঘদিন ক্ষমতার দাপট এবং অপকর্ম করলেও এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার ফন্দি আঁটছেন তিনি। এরইমধ্যে ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। চলাফেরাও করছেন সাবধানে। থাকছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহসান বলেন, স্ত্রীর অসুস্থতা এবং স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান আল বশির যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান বলে ছুটির আবেদন করেছেন। তিনি গত ১৭ আগস্ট আবেদনটি করেন। ২৭ আগস্ট সেটি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো তার ছুটি মঞ্জুর হয়নি। হলে অবশ্যই আমি তা জানতাম।
এ বিষয়ে জানতে ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান আল বশিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতিতে তিনি দেশে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে লুকিয়ে ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। ছুটি পেলে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে পারবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামরুজ্জামান আল বশির একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তার ভগ্নিপতি মো. আবু জাহির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নিজেকে জেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী এমপি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০১৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হলে কামরুজ্জামানেরও জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা জাগে। যেই কথা সেই কাজ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে চলে আসেন। ভগ্নিপতির আশির্বাদে ২০১৬ সালে বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত হয়েই ভগ্নিপতির পরামর্শে ক্রমান্বয়ে পরিবহন স্ট্যান্ড, বালু মহাল, চা বাগানের টিলা কেটে মাটি বিক্রি, বিভিন্ন অফিসে ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণে নেন। বিভিন্ন স্কুলের সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন তিনি। ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদও বাগিয়ে নেন। কোনো কিছুই বাকি ছিল না যেখানে তার পদচারণা ছিল না। আয়ের উৎস সবগুলোতেই তার ছিল একক আধিপত্য। তার দাপটে তটস্থ থাকতেন বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশ ছাড়ের শেখ হাসিনা। এর আগের দিন ৪ আগস্ট রাত থেকেই গা ঢাকা দেন কামরুজ্জামানের বোন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলেয়া আক্তার এবং ভগ্নিপতি তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির। এরপর থেকেই মূলত দুশ্চিন্তায় পড়েন কামরুজ্জামান। নিজেও অনেকটা গা ঢাকা দেন। প্রকাশ্যে তাকে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অফিসও করছেন না ঠিকমতো। চলাফেরা করছেন অনেকটা সাবধানেই।
দেশ ছেড়ে পালানোর কৌশল খুঁজছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরে একের পর এক নেতা আটকের খবরে অনেকটা আতঙ্ক পেয়ে বসে। কোনো পথ না পেয়ে গোপনে অবশেষে তিনি ছুটির আবেদন করেন। যদিও সে আবেদন এখনও মঞ্জুর হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে আবেদন মঞ্জুর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। সুত্র-জাগোনিউজ