চোরাচালান নিয়ে সিলেটে ক্ষোভ বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৪, ৩:২১ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
গত এক বছর ধরে সিলেটে আলোচনায় রয়েছে চিনি চোরাচালান। এর আগে ছিল গরু চোরাচালান। এসব চোরাচালান নিয়ে সীমান্তঘেঁষা জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সম্প্রতি চোরাচালানের পণ্যবাহী গাড়ি ‘যমদূত’ হয়েছে মানুষের জন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান থেকে রক্ষা পেতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে চোরাচালানের গাড়ি। আর এসব গাড়িই এখন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে গত ৩ মাসে চোরাচালানের গাড়ির দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশত। চোরাচালানের অন্যতম রুট সিলেটের জৈন্তাপুর। উপজেলার অন্তত ৫-৬টি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় চিনি, প্রসাধনীসহ নানা পণ্য।
আর এসব পণ্য বহন করে ডিআই পিকআপ ও ই-ইক্স টু পিকআপ। এইসব গাড়ি গরু, মহিষও বহন করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত এক বছর ধরে সিলেট-তামাবিল সড়কে অন্তত ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বেশির ভাগ দুঘর্টনার জন্য দায়ী চোরাচালানের পিকআপ।
গত ১৯শে জানুয়ারি জৈন্তাপুরের ৪ নম্বর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেট কার খালে পড়ে যায়। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর এলাকার তরতাজা ৪ যুবক প্রাণ হারায়। ওইদিন যুবকদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ দেখায় স্থানীয়রা। তারা হাসপাতালও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। গত ৩রা মার্চ জৈন্তাপুরের শ্রীপুর এলাকায় চোরাচালানে ব্যবহৃত পিআকআপের চাপায় ৩ যুবক মারা যায়। এরমধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর ছেলেও রয়েছে। পরপর দুটি ঘটনায় জৈন্তাপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার দরবস্ত পল্লী বিদ্যুতের সামনে চোরাচালানের পণ্যবাহী পিকআপের সঙ্গে লেগুনার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ সদস্যসহ ৬ জন মারা গেছেন। এ দুর্ঘটনার পর দফায় দফায় সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল প্রায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর চোরাচালান নিয়ে মুখ খুলেছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন, চোরাচালানের পণ্যবাহী গাড়ির কারণে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা। তিনটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে করে লাশের মিছিল বাড়ছে জৈন্তাপুরে। এ ছাড়া সিলেট-সালুটিক, সিলেট-কানাইঘাট রুটেও চোরাচালানবাহী গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসব গাড়ির দ্রুতগতির কারণে এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো। এদিকে চোরাচালানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ও রাধানগর এলাকায়। প্রতিদিন চোরাচালানের শতাধিক গাড়ি গ্রামের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এ কারণে পরপর দু’দিন স্থানীয়রা কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন। রাধানগর এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশের বিট অফিসারের চোখ রাঙানির মুখে পড়তে হয় তাদের। শেষপর্যন্ত এলাকাবাসী অনড় থাকায় কয়েক দিন ধরে ওই এলাকা দিয়ে চিনি চোরাচালান বন্ধ রয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, মানুষই চোরাচালান করে। আবার মানুষই মারা যাচ্ছে। বিষয়টি এখন সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। একইসঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতন বাড়াতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। আজ এনিয়ে চিকনাগুলে বৈঠক হবে। প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ ব্যাপারে নতুন করে সিদ্বান্ত নেবো বলে জানান তিনি। জৈন্তাপুরের বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির সিলেট বিভাগীয় কমিটি মুখপাত্র মুজিবুর রহমান ডালিম জানিয়েছেন, ভারত থেকে চোরাইপথে মালামাল পরিবহনে সিলেট-তামাবিল সড়ক ব্যবহার করছে অবৈধ ডিআই ও ই-ইক্স টু নামের পিকআপ। এই পিকআপগুলো এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইপথে চোরাই গরু ও মহিষ পরিবহন করে নিরাপদ স্পট নামে খ্যাত হরিপুরে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, যারা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তাদের ভেতরে ভয় থাকে। আর এই ভয় থেকে তারা বেপরোয়াগতিতে গাড়ি টানে। এতে ঘটে দুঘর্টনা। সুতরাং প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগে আরও বেশি সোচ্ছার হতে হবে। এদিকে, গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে একটি চোরাই পণ্যবাহী পিকআপ বাঘের সড়কের দোকানে ভেতরে ঢুকে যায়। এতে ওই এলাকার ৩ যাত্রী গুরুতর আহত হন।
তারা চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। স্থানীয়দের দাবি হচ্ছে; চোরাচালান রোধ করা হবে সীমান্ত এলাকায়। যখন গাড়ি সড়কে উঠে যায় তখন তাদের ধাওয়া করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। বাঘের সড়ক এলাকায় তাই হয়েছে। সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ নিয়মিত চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। ধরপাকড় হচ্ছে। পুলিশ এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট-তামাবিল সড়কসহ জেলার সব সড়কে যানবাহনে সচেতনতা বাড়াতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের এই কার্যক্রম কাজে আসবে বলে জানান তিনি।