কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১৬ টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সিলেটের তালহা, গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪২:১৯,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
লিবিয়ার রাজধানী বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ১১তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি প্রতিযোগী হাফেজ আবু তালহা (১৩)। মঙ্গলবার (১৩ জুন) ১১৬ দেশের প্রতিযোগীর মধ্যে এ সাফল্য অর্জন করেন তিনি। তালহার বাড়ি সিলেটে।
প্রতিযোগিতা পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো- পূর্ণ কোরআন হিফজ, পূর্ণ কোরআন হিফজসহ তাফসির ও দশ কিরাত হিফজ বিভাগ।
পূর্ণ কোরআন হিফজ:
প্রথম পুরস্কার: সোহাইব মুহাম্মদ আবদুল করীম (লিবিয়া)- ৫০ হাজার ডলার।
দ্বিতীয় পুরস্কার: আবু তালহা আবদুল খালেক (বাংলাদেশ)- ৪০ হাজার ডলার।
তৃতীয় পুরস্কার: আবদুল আজিজ বিন মুনীর বিন সোলাইমান (ওমান)- ৩০ হাজার ডলার।
চতুর্থ পুরস্কার: আহমাদ জারুল্লাহ আবদুর রহমান (ইরাক)- ২০ হাজার ডলার।
পঞ্চম পুরস্কার: আবদুল আলীম আবদুর রহীম (কেনিয়া)- ১০ হাজার ডলার।
পূর্ণ কোরআন হিফজসহ তাফসির:
প্রথম পুরস্কার: আবদুস সালাম ফাতহী আল আমরুনী (লিবিয়া)- ৫০ হাজার ডলার।
দ্বিতীয় পুরস্কার: আবদুল ওয়াহহাব কাসেম আহমাদ (সোমালিয়া)- ৪০ হাজার ডলার।
তৃতীয় পুরস্কার: ওমর আহমাদ নূরী হাসান (সিরিয়া)- ৩০ হাজার ডলার।
চতুর্থ পুরস্কার: আবদুল মাজীদ মুজাহিদ আলী (ইয়েমেন)- ২০ হাজার ডলার।
পঞ্চম পুরস্কার: বোরহান আল ইয়াদান রহিমুফ (রাশিয়া)- ১০ হাজার ডলার।
দশ কিরাত হিফজ:
প্রথম পুরস্কার: ইদয়ান শেহজাদ রহমান (আমেরিকা)- ৫০ হাজার ডলার।
দ্বিতীয় পুরস্কার: হোসাইন মুহাম্মদ নূর (কেনিয়া)- ৪০ হাজার ডলার।
তৃতীয় পুরস্কার: ইউসুফ ইসহাক ইবরাহীম (নাইজেরিয়া)- ৩০ হাজার ডলার।
লিবিয়ায় হিফজ প্রতিযোগিতায় ১১৬ টি দেশের প্রতিযোগী অংশ গ্রহণ করে। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের উত্তর মাদারখাল গ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল খালিকের ছেলে আবু তালহা। মঙ্গলবার লিবিয়ার বানগাজী শহরে স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেলে সে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে হাফেজ আবু তালহা বাংলাদেশী টাকায় অর্ধকোটি টাকা, ক্রেস্ট, সনদসহ উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতাটি চলতি মাসের তিন তারিখ থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলছিল, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আবু তালহা অংশগ্রহণ করে।
যাকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কেরাত সংস্থা প্রায় বাংলাদেশের লক্ষাধিক হাফেজদের মধ্য থেকে পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে পাঠিয়েছেন।
আবু তালহার লিবিয়া আসা থেকে শুরু করে যাওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ খরচ প্রতিযোগিতার আয়োজকরা বহন করছে।
এর আগেও আবু তালহা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এনটিভিতে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে এবং বাংলাভিশন চ্যানেলে ‘পুষ্টি পবিত্র কোরআনের আলোতে’ ৩য় স্থান অর্জন করে, লন্ডন প্রবাসী এম জাকির হোসাইন হিফজুল ক্বোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তালহা বারবার অংশগ্রহণ করে সফলতা লাভ করেছে।
তাঁর চাচাতো ভাই প্রবাসী শাহিদ জানান প্রথমে মাদারখালেরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র জীবন শুরু তাঁর শুরু। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত দারুল হিকমাহ আল ইসলামিয়াতে হিফজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ির মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসায় অধ্যয়নরত রয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে তালহা বিষয়টি ভিডিওকলে তাঁর বাবাকে জানায়। আনন্দে তাঁর বাবা কেঁদে ওঠেন। এ যেন ছেলের কৃতিত্বে বাবার আনন্দ অশ্রু।
বাংলাদেশের সিলেট তথা জকিগঞ্জে আনন্দের বন্যা বইছে আবু তালহার এমন অর্জনে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবু তালাহা যেভাবে বিশ্বসেরা হাফেজ হয়েছে, সেভাবে আল্লাহ তা’আলা যেন একজন বিশ্বসেরা আলেম হিসেবে কবুল করেন এবং আল্লাহ তা’আলা যেন পুরো বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দ্বীনের দায়ী হিসাবে কবুল করেন।