থামছে না নবীগঞ্জের সর্বনাশা কুশিয়ারা নদীর ভাঙন : নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-ভূমি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের চারিদিকে শুধু ভাঙনের শব্দ। কোনো কিছুতেই যেনো থামছে না নবীগঞ্জের সর্বনাশা কুশিয়ারা নদীর ভাঙন! এ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বহারা হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ভাঙন ঠেকাতে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন পদক্ষেপ! এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। বছরের পর বছর ধরে থেমে থেমে বন্যা ও প্রতিদিনের নদী ভাঙ্গনে দীঘলবাকবাসীর যেন নিত্য সঙ্গি। এদিকে, গত ক‘দিনের টানা বর্ষনে নতুন করে ভাঙ্গনের ফলে বিলিন হয়ে গেছে কয়েকটি বাড়ী ও স্থাপনা।
এরমধ্যে দীঘলবাকের চুনু মিয়া ও আব্দুল হাফিজের বাড়ি ইতিমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়াও কুমারকাদা গ্রামের কিছু অংশ, হোসেনপুর গ্রামের ঢালার সামন, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড (নর্থ প্যাডে) সন্নিকটে পশ্চিম দিকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন অব্যাহত থাকলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে ওই এলাকার জনপদের। নদী ভাঙ্গন যেন গরীব ও ধনীকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আপদে বিপদে ধনীরা গরীবদের সাহায্য করে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কে কার সাহায্য করবে?
কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে দীঘলবাক এলাকার বসতবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার উপাসনালয় ইত্যাদি বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতীকরূপে বিরাজমান। তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা হ্রাস, ঘরবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তান্ডবলীলায় ফসলহানি, নদীতে চর জাগা, নৌযান চলাচল বিপর্যস্ত, মৎস্য সম্পদের অভাব, কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবন যাত্রার নিরুমান সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে। কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্থ ও গৃহহীন হয়েছেন বারবার উত্তর নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা, গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুল্লা, মথুরাপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী। কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে ইতিপুর্বে বিশাল মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করেছিল দীঘলবাকবাসী।
জানা যায়- দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা রোধ কল্পে সামান্যতম হলেও সরকারী নানা পদক্ষেপ, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন ও সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। কিন্তু নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউপির জনগনকে কোন সরকারী সাহায্য, পুনর্বাসন করা হয়নি, এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধ কল্পে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফলে উল্লেখিত জনপদের বিভিন্ন পেশার লোকজন চাষাবাদযোগ্য জমি, বাসগৃহ, বনজসম্পদ বারবার হারানোর বেদনায় এলাকার বাতাসে দুঃখ ও হতাশার করুণ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উল্লেখিত ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনের ফলে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে দীঘলবাক ইউনিয়নে বেকারত্ব, অশিক্ষা, দারিদ্রতা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতিপুর্বে দীঘলবাক বাজার, হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্টান একাধিকবার নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে অনেকের বাড়ী-ঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে জীবন করে আসছে। এক দিকে নদী ভাঙ্গন অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টির কারণে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মানুষের অকাল বন্যার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এটা যেন তাদের জীবনে আষ্ঠেপৃষ্টে বাধাঁ। এলাকাবাসী করাল কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গন থেকে মুক্তি চান। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।