ফের ফায়যুরের নম্বর থেকে হুমকি, কে এই হুমকিদাতা ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দেশে আবারও শুরু হয়েছে মোবাইল ফোনে বিশিষ্টজনদের হত্যার হুমকি। এসব হুমকির সাথে আবারও উঠে এসেছে ফায়যুর রহমানের নাম। বিশিষ্টজনদের যে মোবাইল ফোন নাম্বার থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এটির ব্যবহারকারী সিলেটের এই তরুণ।
তবে ফায়যুরের দাবি, আবারও সাইবার ক্রাইমের শিকার বলে দাবি করেছেন। গণমাধ্যমে এসব হুমকির খবরের সাথে তার নম্বর দেখতে পেয়ে তিনি পুলিশের কাছেও এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন আগের মত আবারও তার মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিশিষ্টজনকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এর আগেও দু দফায় তিনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে ছয় মাস করে এক বছর কারাগারে ছিলেন, পরে হুমকির সাথে তাঁর সংশ্লিস্টতা পায়নি পুলিশ। আদালত থেকে অব্যাহতি পান তিনি, তাকে ওই মামলার সাক্ষীও করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ ফায়যুরের আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। রহমতুল্লাহ বলেন, ফায়যুর রহমান আমাদের কাছে এই মোবাইল নম্বরটি তার বলে জানিয়েছে। তবে তিনি এমন কোনও এসএমএস দেননি বলেও আমাদের জানিয়েছে।
গত চারদিনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, লেখক মইনুল আহসান সাবের, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
হুমকিদাতা নিজেকে কখনো আইএস আবার কখনো আনসারুল্লাহ হিসেবে পরিচয় দিলেও সকলকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে একই মোবাইল ফোন নাম্বার থেকে। শুক্রবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়রিতে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল উল্লেখ করেছেন তাকে এবং তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হককে ০১৬২৯৯৬৭৫৫১ নাম্বার থেকে এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদও জিডিতে একই নাম্বার থেকে হুমকি আসে বলে উল্লেখ করেন। মইনুল আহসান সাবের এবং শামসুজ্জামনকেও এই নাম্বার থেকে হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ০১৬২৯৯৬৭৫৫১ মোবাইল ফোন নম্বরটি সিলেটের তরুণ ফায়যুরের। তিনি আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সিলেটের একটি স্থানীয় দৈনিকে কর্মরত আছেন। এর আগে দুদফায় তার আরেকটি নম্বর থেকে দেশের শতাধিক বিশিষ্টজনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সে সময় তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, তার নম্বারটি ক্লোন করে হুমকি দিচ্ছেন আরেকজন।
২০১৩ সালে একবার, ২০১৪ সালে একবার দুইবার গ্রেপ্তার হয়ে ৬ মাস জেলে ছিলেন ফায়যুর রহমান। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ ছয়জন সাংসদকে হত্যার হুমকি দিয়ে এসএমএস পাঠিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৩০ জুন একইভাবে আইনমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েছেন। পরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে প্রমাণ হয় তার নম্বর থেকে এসব বার্তা যায়নি। তার মোবাইল নম্বর ক্লোন করে আব্দুল হক নামের একজন এসব বার্তা পাঠান। মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি। রাজধানীর তেজগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আব্দুল হককে। যিনি ফয়যুজের পূর্ব পরিচিত এবং তার দাবি অনুযায়ী তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।
জানা যায়, ফায়যুর রাহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গাংপার নোয়াকোট গ্রামে। ফায়যুর সিলেটের একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সিলেটের স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তিনি কাজ করেন। ফয়যুরের দাবি ২০০৭ সালে সিলেটে ‘মুক্তস্বর’ নামের একটি ভিন্নধর্মী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনে মতদর্শিক বিরোধ থেকেই আব্দুল হক তাকে শত্রু ভেবে নেয়। তিনি বলেন আব্দুল হক জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় তাকে ওই সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পরই তাদের মধ্যে তিক্ততার সূত্রপাত।
মন্ত্রী-এমপিসহ দেশের ১৫৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত বছর গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো আব্দুল হক নামের ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে। আদালতে তিনি অন্যের সিম ক্লোন করে হুমকি প্রদানের কথা স্বীকারও করেন। আব্দুল হক বর্তমানে সিলেট কারাগারে আছেন, হকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটিও বিচারাধীন। ওই মামলায় এখন প্রধান সাক্ষী ফয়যুর রহমান।
ফয়জুরের বিরুদ্ধে বিচারাধীন এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক শিবেন্দ্রচন্দ্র দাশ বলেন, আবদুল হক জানতে পারে যে, বিনু নামের একটি অ্যাপসসহ অন্যান্য এপস দ্বারা অন্যের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো সম্ভব। যে মোবাইল সিম নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো হয় সেই মোবাইল সিম নম্বরে বার্তার একটা পিন নম্বর যায়। সেই পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিনু অ্যাপসের মাধ্যমে অন্যের মোবাইল সিম নম্বর ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো যায়। আসামি আমিনুর রহমানকে আবদুল হক এ বিষয়টি খুলে বলে। পরে আমিনুর ফয়জুরের মোবাইলের পিন নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর আবদুল হক ফয়যুরের পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিনু অ্যাপসহ অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন’
এদিকে যোগাযোগ করা হলে ফায়যুর রহমান বলেন, ” আগের মত আমার নম্বর ক্লোন করে বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়ে আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হয়েছে। হয়রানিরও শিকার হতে হয়েছে। আমি খুব আতকিংত বোধ করছি। আমি কাউকে কোন এসএমএস দিয়ে হুমকি দেইনি। পুলিশ চাইলে আমার সমস্ত কল/এসএমএস রেকর্ড চেক করতে পারে।”
তিনি বলেন, “এর আগে দুবার আমাকে ফাঁসানো হয়। আদালতে আমি নির্দোষ প্রমানিত হই। এখন আব্দুল হক জেলে কিন্তু তার সহযোগিরা রয়েছে। তার ভাই অনুপম হকও একইভাবে আইটি এক্সপার্ট। আব্দুল হকের বিরুদ্ধে আমি যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারি সেজন্য তারা আবার আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের জিডির ব্যাপারে সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন শনিবার বলেন, তাঁর (জাফর ইকবালের) নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসেও সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হুমকিদাতা সনাক্ত করা গেছে কী না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।