বিলীনের পথে ‘হাসন রাজার’ স্মৃতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১০:১৬,অপরাহ্ন ০১ আগস্ট ২০১৬
আক্তার আহমেদ শাহেদ, বিশ্বনাথ থেকে: ‘মরিলে হইব মাটিতে বাসা, পড়িয়া থাকিবে লক্ষণশ্রী আর রঙ্গের রামপাশা। লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি বালানায় আমার। জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন, হায়রে বাঁচবে কতদিন, বানাইত দালানকোঠা করিয়া রঙ্গিন। মরমী কবি হাসন রাজা তার জীবদ্ধশায় এমনি বেশ কয়েকটি গান রচনা করে ছিলেন। ছন্দে আর গানের কলিতে এক সময়ে জেগে উঠেছিল কবি দেওয়ান হাসন রাজার মরমী সুর।
হাসন রাজা তার গানের সাথে মিল রেখে বিশ্বনাথের রামপাশার বাড়ীতে গড়ে তুলেননি কোন রাজপ্রাসাদ। যেটুকু ছিল বর্তমানে ততটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে।
তৎকালীন সময়ে চুন-চুরকি তৈরির একটি দেয়াল আর ছোট্ট পাকা একটি দু’তলা দালান বাড়ীতে দাড়িয়ে আছে। তাও কালের বিবর্তনে ধসে পড়ছে। সেগুলোই হাসন রাজার বাড়ীর একমাত্র স্মৃতি। মরমী কবি হাসন রাজার সেই স্মৃতিগুলোও সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি গানের কলিতে ফুটে উঠেছিল আবহ্বান বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যও সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সুখ দুঃখের কথা। তবে তার বেশীরভাগ গানেই রয়েছে দেহতথ্যের সমাহার। মুক্তমনা মানুষের মনের কথাগুলোকে তার গানের কলি দিয়ে তুলে ধরেছিলেন সভ্যতার কাছে। সত্যিই ছিলেন কবির হাসন রাজা একজন মরমী সাধক।
আধ্যাত্ন্যিক রাজধানী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা বাজারের পশ্চিমে রয়েছে মরমী কবি হাসন রাজার একটি বাড়ীও। ওই বাড়ীতে শুধু হাছন নয়, অনেক উত্তরসূরীরাও জন্ম গ্রহণ করে দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম কুড়িয়ে এনেছেন।
হাসন রাজার সেই বাড়ীতে একসময়ে ছিল পর্যটকদের ভীড়। রাজার জমিদারী জীবনের সেই ইতিহাস ও রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে একনজর দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সেই বাড়ীতে ছুটে আসতেন। এখন আর আগের মত সেখানকার পরিবেশ নেই।
জানা যায়, মরমী কবি হাসন রাজা প্রায় পাঁচ লক্ষ বিশ হাজার বিঘা সম্পত্তির মালিকও ছিলেন। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে, কবি হাসন রাজার কোন উত্তরসূরী না থাকায় রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোর দেখার মত পূর্বের পরিবেশ না থাকায় আগের মত কোন পর্যটক সেখানে যাননি। ওই বাড়ীতে রয়েছে শুধু দু’টি জরাজীর্ণ কুটির ও খাজনা আদায়ের একটি বৈঠকখানা। আর ওই বৈঠকখানাটি ১৩৫২ বাংলা সনে নির্মাণ করেছিলেন রাজার প্রথম পুত্র খান বাহাদুর একলিমুর রাজা চৌধুরী।
রক্ষণা-বেক্ষনের অভাবে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে রয়েছে হাসন রাজার সেই বাড়ীটি। এমনকি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মরমী কবি হাসন রাজার রেখে যাওয়া পুরোনো স্মৃতি।