সন্ত্রাসের গন্ডি ও এর কারনসমূহ এবং প্রতিরোধের কার্যকরী উপায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৬, ৪:২৬ অপরাহ্ণ
আজ হলফ করে কোন দেশই বলতে পারবে না যে আমরা বিশ্বায়ন সন্ত্রাস হতে নিরাপদে আছি। সন্ত্রাস কিছু কিছু ব্যক্তি বা গোস্টি দ্বারা নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘটে থাকে।যেমন হতে পারেঃ রাজনৈতিক, ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের মতাদর্শিক লক্ষ্য, ধর্মীয় লক্ষ্য অর্জন। সন্ত্রাসী গ্রুপের লক্ষ্য মূলত তাদের স্বার্থ ষোল আনা পূর্ণ করা সেখানে তারা মানুষের ধর্ম কর্মের দিকে খেয়াল করে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা মানব ধর্মের উপর আঘাত করে থাকে, এখানে খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম ধর্ম বাছ বিচার করে না বা ভৌগলিক গণ্ডির মাঝে সীমিত থাকে না। যেমনটি ঢাকার গুলশানে হলি আরটিজান বেকারিতে ঘটেছে, সেখানে খ্রিষ্টান, হিন্দু, ও মুসলিম সবাইকে মর্মান্তিকভাবে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসী ক্রিয়াকলাপ কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে আজ সীমাবদ্ধ নহে, এটি এশিয়া মহাদেশ থেকে শুরু করে, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত।এখানে উল্লেখ্য যে, মদিনায় মসজিদে নববীর পাশে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং তাঁরপরে ফাঞ্চের নিস শহরে তাদের জাতীয় দিবসের এক আনন্দময় অনুস্টানে আইসক্রিমের লরি/ট্রাক প্রায় দুই কিলোমিটার চালিয়ে প্রায় ৮৪ জনকে ট্রাকের নীচে পিষে নারকীয় হত্যার বিরল ঘটনা ঘটল। একসময় মনে হতো সন্ত্রাসীরা গরীব বা খুব নিচু পরিবারের বা সুবিধা বঞ্চিতদের পরিবারের হয়ে থাকে, এক শ্রেণীর মানুষ বলাবলি করত শুধু মাদ্রাসার ছাত্ররা এ কাজ করে থাকে কিন্তু না কিছু কিছু সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা গেছে তাদের ধারণা ভুল আজ তারা সমাজের খুব এলিট ফ্যালিমির উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সন্তান হয়েও বিপথগামী যাদের টাকা পয়সার অভাব মোটে ও নাই।
চলুন সবাই একটাই স্লোগান বলি –
দেশ বাঁচাও, বিশ্ব বাঁচাও, বাঁচাও পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্ব সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদীদের শিকারের হাত হতে!
***সন্ত্রাস বা জঙ্গী মদদ পুষ্ট হবার পেছনের কারন সমূহঃ
·ক্ষমতা জাহির করা (নিজের বা নিজেদের ক্ষমতা বা পেশী শক্তি জাহির করার জন্য এক শ্রেনী মরিয়া তারা সকল জনমতের ঊর্ধ্বে থেকে যেতে চায় আর চায় কাটা দিয়ে কাটা তুলতে মানে আপনাকে দিয়েই আপনার ভাইকে হত্যা করতে চাইবে, সব সময়ই চায় তার বা তাদের শুত্রুর উপর যেকোন মূল্যে জয়ী হতে!)
·মতভেদের পার্থক্য (মানুষ মাত্রই ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ বা নীতি বা বিশ্বাসের উপর প্রতিস্টিত তাই দলীয় মতভেদ, রাজনৈতিক মতভেদ, ব্যক্তিগত মতভেদ, ধর্মীয় মতভেদ ও এর অন্তর্ভুক্ত, কেই কারো মতভেদ মেনে নাও নিতে পারে আর এর থেকেই শুরু হতে পারে ভয়াবহ সন্ত্রাসীক্রিয়াকলাপ!)
·স্বার্থ (নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার নিমিত্তে কিছু সংখ্যক লোক দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপে জড়িয়ে পড়ে)
·দারিদ্রতা (দারিদ্রতা শব্দটি যদিও কবির কবিতায় খ্রিষ্টের সম্মানের সাথে তুলনা করা হয়েছে তথাপি বাস্তবের হীন দারিদ্রতা একটি মানুষকে সন্ত্রাস বা জঙ্গি হতে ও দ্বিধা বিভক্ত করে না কোণ কোন ক্ষত্রে)
·বেকারত্ব ( বেকারত্বের ফলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের, শিক্ষা, চিকিৎসার অভাবহেতু বকে যাওয়া আর উপয়াওন্তর না দেখে সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ানো অবাস্তব নয় )
·দুর্নীতি পরায়ণতা (দুর্নীতির ফলে এক শ্রেণীর মানুষ দ্রুত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার মত অবস্থা সেখানে যারা পারে না তা করতে সেই শ্রেনী হাতে অস্র নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে)
·অবিচার বা ন্যায়বিচারের ঘাটতি (দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়নের মাত্রা যদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায় বা দেশে ন্যায়বিচারের ঘাটতি দেখা দেয়)
·শিক্ষার অভাব বা ঘাটতি ( একজন মানুষকে যদি বিবেকের শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয় বা তাঁর নিজ নিজ ধর্মের শিক্ষায় মূল বা গভীরের শিক্ষা দেয়া হয়, সেই প্রাথমিক শিক্ষাটা কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাঁর নিজ পরিবার তথা মা-বাবা, দাদা, চাচা, পাঠশালার গুরুজন হতেই আসে)
·বন্ধু-বান্ধব নির্বাচনে সচতুর হওয়ায় উদাসীনতা (একজন ভাল বন্ধু কিন্তু জগতের শ্রেস্ট সম্পদ আবার খারাপ তথা বকে যাওয়া বন্ধু-বান্ধব কিন্তু আপনাকে আপনার জীবদ্দশায় নরকের কিনারায় পৌঁছাতে দ্বিধা করবে না!)
·আপনার হয়ত কাউকে স্যার/হুজুর/গুরুজন হিসেবে চিনেন ও জানেন কিন্তু উনার গোপন স্বার্থ বা মানবতার জন্য চরম খারাপ কোন উদ্দেশ্য আপনি জানেন না, উনার সাথে আপনি উঠবস করেন আর তার ফাঁকে উনি আপনাকে কথার ম্যার প্যাঁচে, টুপ দিয়ে আপনাকে কাবু করে ফেলল আপনার ব্রেন ও মাইন্ড ওয়াস হয়ে গেল তাতে আপনি ঘূর্ণাক্ষরে ও টের পেলেন না, এই ধরনের অবস্থায় যে উপস্থিত বুদ্ধির দ্বারা বেঁচে যায় বা সটকে পড়ে সেই প্রকৃত বিদ্বান্।
·জীবনের প্রতি চরম উদাসীনতা (পর পর সিরিয়াল কয়েকটি অসফল ঘটনা এর জন্য দায়ী হতে পারে)
·আখাংকিত ব্যক্তি বা বস্তু না পাওয়া (নিজের চাহিদামত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপনকরনের ব্যর্থতা বা আখাংকিত বস্তু সময়মত না পেলে কক্ষপথচ্যুত হওয়া অস্বাভাবিক নয়)
***সন্ত্রাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কিছু কার্যকরী উপায়ঃ
·নিকটস্থ থানায় বা পুলিশের কাছে সন্দেহজনক কারজ্যকলাপের বিরুদ্ধে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দায়ের করা
·আন্তর্জাতিক পরিসরে সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য উভয় দেশ বা গুটিকয়েক দেশ মিলে একত্রে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
·একটি দেশ পারে অত্যাধুনিক কারিগরি সরঞ্জাম, অস্ত্র, নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহারের জন্য দেশে উৎপাদন বা বিদেশ থেকে সহজোগিতা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করতে।
·দারিদ্রতা দূরীকরণে সাহায্য বা সহায়ক ভূমিকা নেয়া যেমনঃ দুঃস্থ এতীম, অসহায় পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসা। খালি নিজে ভাল খেলেন, ভাল পড়লেন আর আপনার পাড়া প্রতিবেশী, দেশবাসী কি পড়ল, কি খেল তার খেয়াল বা ভ্রুক্ষেপ করলেন না তাতে মহান প্রভু নারাজ বা অখুশি হন।
·সম্পদ পুনঃবণ্টনে বা সুষম বণ্টনে সাহায্য করা (ইসলামিক পরিভাষায় এটাকে যাকাত বলা হয়)
·আপনার সন্তানকে নিজের ধর্মের প্রতি শিক্ষিত করে তুলুন তার সভ্য মানবিকগুনের চারিত্রিক বিকাশ সাধনে অগ্রাধিকার দিন। সামাজিক ও পারিবারিক গঠনমূলক মনোভাব (constructive attitude) বাড়ানোর উপায় খুঁজুন , ধ্বংসাত্মকমুলক মনোভাব (destructive attitude) থাকলে তা পরিহার করার উপায় বাড় করুন।
· আপনি অন্যের মাঝে খারাপ কিছু পেলে তাকে আপনার ভাল লাগার কাজগুলোতে মনোনিবেশ করান এতে তার একাকীত্ব দুরীভুত হবে
·আপনি আপনার নিজের ভাই, বোন, মা, বাবা, চাচা, দাদা, দাদী, নানা, নানীর ও ভাল বন্ধু বান্দবের সাথে সময় দিন তাতে একঘেয়েমি জীবনের কষ্ট লাঘব হবে ও ভাল চিন্তার দুয়ার খুলে যাবে
·বাসা-বাড়ি, মেস ভাড়া দেয়ার সময় ভাড়াটিয়া ব্যক্তির ফটো আইডি বা পাসপোর্টের কপি, কালার ছবি চেয়ে নিবেন আর চাকুরী বা ব্যবসা করলে তার ঠিকানা ও চেয়ে নিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে তার পরিচিত কোন ব্যক্তির রেফারেঞ্চ রেখে দিবেন।
·অফিস আদালত, হাই-স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সচেতন দৃষ্টি দিয়ে ছাত্র ছাত্রীর পাঠদান করতে হবে।
·আগুন্তুক বা অপরিচিত ব্যাক্তিকে খুব সহজেই খুব কাছের মনে করবেন না, কাউকে আপন করতে হলে তার সাথে সময় ব্যয় করে তারপর সব কিছুর ব্যাপারে চিন্তামুক্ত হতে পারেন।
·সন্ত্রাসী বা জঙ্গীরা দ্রুত তাদের গতিপথ বা পরিকল্পনার চক পাল্টাতে পারে, সুতরাং শুধু একপথেই আপনার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েই ক্ষানত দিলেই চলবে না, আপনি ও গতিপথ পাল্টান।
·পরিস্থিতির কারনে আপনার নিকটস্থ কেও যদি ওপথে পা বাড়ায় তাহলে সাধ্যমত দ্রুত তাকে ফেরানোর ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে, প্রয়োজনে কাছের কারো সাথে এ ব্যাপারে খোলামেলা আলাপ সেরে নিয়ে, আইনের দ্বারস্থ হোন যদি তাকে সহজে ফেরানো সম্ভব না হয়।
রেজাউল আবেদীন
ফ্রীল্যান্স লেখক ও গবেষক