‘বিশ্বাস করেন, এই এক বছরে আমাদের খবর কেউ নেননি’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৮:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
‘উনি (এটিএম শামসুজ্জামান) চলে গেছেন মাত্র এক বছর হয়েছে। এই এক বছরেই সবাই ভুলে গেছে তাকে। পরিবারের কথা তো মনেই নেই কারও। বিশ্বাস করেন, এই এক বছরে মিডিয়ার কেউ তার পরিবারের খোঁজ নেয়নি। কোনো সাংবাদিকও এসে দেখেননি তার পরিবার কেমন আছে। মৃত্যুবার্ষিকীতেও তো তাকে কেউ স্মরণ করলো না। শুধু আপনারা ফোন দিলেন।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বললেন প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান।
এটিএম শামসুজ্জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছরের ২০ জানুয়ারি আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। এই এক বছরে এটিএম শামসুজ্জামানের পরিবারের খোঁজ নেননি মিডিয়ার কেউ। অথচ জীবদ্দশায় প্রায় প্রতিদিনই তার বাড়িতে আনাগোনা ছিল নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষের।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাই ক্ষোভ নিয়ে এটিএমের স্ত্রী বললেন, ‘বেঁচে থাকতে সবাইতো খোঁজ খবর নিতেন। অসুস্থ হয়ে যখন বাসায় বসে গেলেন, তখনও অনেকেই খোঁজ নিয়েছেন। মানুষটা মরে গেলো, আর সাথে সাথেই তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলো। কেউ তাকে মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করলেন না। এতো দ্রুত সবাই তাকে ভুলে গেলো!’
রুনি জামান বলেন, ‘নাটক, সিনেমার জন্য সারাটা জীবন দিয়ে গেলেন। নিজের স্বার্থে কিচ্ছু চিন্তা করেননি, নাটক সিনেমাকে সব দিয়ে গেলেন। অথচ তার মৃত্যুর পর কেউ সামান্য খোঁজ খবরটাও নিলেন না। অন্তত নাটক সিনেমার মানুষরাতো তার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে পারতেন! হয়তো এটাই বাস্তবতা।”
শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়। তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন।
তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।
অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালিতে’ অভিনয় করেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার। এছাড়া, ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।