সিলেটে স্বামীর হাত ধরে যেভাবে ইয়াবা বিক্রেতা সাবিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৯:৩৯,অপরাহ্ন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ওয়েছ খছরু:
স্বামী তবারক পেশাদার অপরাধী। এক নামেই চিনেন বিশ্বনাথের মানুষ। গাড়ি চুরি, মাদক বিক্রির একাধিক হুলিয়া তার বিরুদ্ধে। বসবাস করতেন বিশ্বনাথেই। কিন্তু মাদক বিক্রির টাকায় দোতলা বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে বিতর্কিত হন। এরপর থেকে বসবাস করছিলেন সিলেট শহরতলীর অতিরবাড়ি এলাকায়। স্বামীর মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাদকরানী হয়ে উঠেন স্ত্রী সাবিনা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।
প্রায় ৬১ হাজার পিস ইয়াবার চালান পাচারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। তবারক আলীর বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার পাঠাকইন গ্রামে। এক সময় চানাচুর বিক্রি করতেন তবারক। পরে গাড়ির হেল্পার হিসেবে পেশা শুরু করেন। এক সময় তবারক পেশাদার গাড়ি চোর হয়ে উঠেন। ২০১৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত গাড়ি চুরির ঘটনায় তবারক আলী একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ৭-৮টি গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে। বিশ্বনাথের পুলিশের হাতে বন্দি থাকা অবস্থায় একবার পালিয়ে যান। এরপর থেকে তবারকের পরিচিতি বিশ্বনাথে ছড়িয়ে পড়ে। তবারক গাড়ি চুরির পথ ছেড়ে দেন প্রায় ৪ বছর আগে।
এরপর তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। গাজা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। পরে ধরেন ইয়াবা ব্যবসা। বিশ্বনাথ থানায় একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিত। বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তবারকের বিরুদ্ধে মাদক সহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশ খুজছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাকে বিশ্বনাথে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান- তবারক আলী বিশ্বনাথের পূর্ব চানশীর কাপন গ্রামে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ইয়াবা বিক্রির টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর এসেছে। বাড়ি বানালেও তবারক বসবাস করতেন না। তিনি স্ত্রী সাবিনা আক্তার সহ শহরতলীর অতিরবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। বিতর্কিত হওয়ার কারণে তবারক বর্তমানে আড়ালে। এই সুযোগে ফ্রন্টলাইনে এসেছে তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার। পুলিশ জানায়- সাবিনা আক্তার সম্প্রতি সময়ে দরিদ্র ঘরের মহিলাদের নিয়ে মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেছেন। অতিরবাড়ি এলাকায় বাসায় মাদক বিক্রির আখড়া হিসেবে গড়ে তোলেন।
সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তবারকের কাছে আসে বিশাল ইয়াবার চালান। আর স্ত্রী সাবিনার মাধ্যমে মাদকের চালান পৌঁছে দেন রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায়। হবিগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়- গত বুধবার রাত দেড়টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি দল ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা মূল্যের ৬১ হাজার পিছ ইয়াবাসহ ‘নাহিদা ও শাহিনা’ নামের দুজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। আটক নাহিদা বেগম মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার লক্ষীপুর গাবতলী বাজারের আসালত পেয়াদার মেয়ে ও শাহিনা খাতুন বাগেরঘাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার ভাইজোরা গ্রামের মৃত আবদুল কাদেরের মেয়ে। পুলিশ জানায়- নাহিদা বেগমের পেট ও বুকের মাঝখানে পিটিং করা আলাদাভাবে সাদা টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১৫৫ প্যাকেটে (প্রতি প্যাকেটে ২০০পিছ করে) থাকা ৩১ হাজার পিছ লাল রংয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট এবং শাহিনা খাতুনের পেট ও বুকের মাঝখানে পিটিং করা আলাদাভাবে সাদা টেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ১৫০ প্যাকেটে (প্রতি প্যাকেটে ২০০ পিস করে) থাকা ৩০ হাজার পিস লাল রংয়ের ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদা ও শাহিনা পুলিশকে জানায় সিলেটের বিশ্বনাথ থানার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত আলকাছ আলীর পুত্র কুখ্যাত মাদক বিক্রেতা তবারক আলীর স্ত্রী সাবিনা আক্তার তাদেরকে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বহন ও বিক্রয় করে আসছেন।
বুধবার ২০ হাজার বিনিময়ে ওই চালান তারা পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। তার আগেই তারা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এদিকে- ৬১ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটকের ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর হবিগঞ্জ পুলিশ সাবিনা আক্তারের খোজে অভিযান শুরু করে। বিশ্বনাথ ও দক্ষিণ সুরমা পুলিশের সহযোগিতায় শহরতলীর অতিরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে- পালিয়েছে তবারক আলী। পুলিশ জানিয়েছে- তবারককে গ্রেপ্তারে খুঁজছে পুলিশ।