সিলেটে জালিয়ানওলাবাগ গণহত্যার শতবর্ষ পালিত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ৮:০৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ইতিহাসের কুখ্যাত জাালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৫ টায় সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাহিত্য আসর কক্ষে ‘জালিযানওয়ালাবাগ গণহত্যার শতবর্ষ পালন কমিটি, সিলেট’ এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
জালিযানওয়ালাবাগ গণহত্যার শতবর্ষ পালন কমিটি, সিলেট’র আহ্বায়ক এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম’র সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাম প্রগতিশীল লেখক ও গবেষক অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সিকন্দর আলী, সাম্যবাদী দলের সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড ধীরেণ সিংহ, গণতান্ত্রিক পার্ট সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি আরিফ মিয়া, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, বাম প্রগতিশীল লেখক স্নাংশু ভট্টাচার্য, লেখক শিবিরের নেতা ও সাংবাদিক আখলিছ মিয়া।
বক্তারা বলেন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে এসে বিভিন্ন সময়ে যে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল, শাসিত ভারতের ওপর অস্ত্রবাজি করেছিল- সেসব ঘটনা হার মেনেছিল আজ থেকে শত বছর আগের জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার কাছে। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।সেদিন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরসংলগ্ন জালিয়ানওয়ালাবাগে শিখদের নববর্ষ উৎসবে উপস্থিত হয়েছিলেন নানা ধর্মের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। শহরে তখন চলছিল রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আন্দোলন থামাতে ব্রিটিশ সরকার জারি করেছিল ১৪৪ ধারা। সে ধারা ভঙ্গ করেই নববর্ষ উৎসব পালনের জন্য সবাই সমবেত হয়েছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগের ঐতিহাসিক ময়দানে। ময়দানের চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। প্রবেশদ্বারও সংকীর্ণ। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের কানে পৌঁছে যায় এই জমায়েতের কথা।
তৎক্ষণাৎ তিনি বন্দুকধারী একশ’ সেনা ও সাজোয়া যান নিয়ে হাজির হন সেখানে। মূল ফটক বন্ধ করে কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই নিরীহ ও নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। এতে স্তম্ভিত হয়ে যায় উপস্থিত লোকজন। একটানা ১০ মিনিট ধরে চলে গুলিবর্ষণ। ১,৬৫০টি গুলি কেড়ে নেয় কমপক্ষে ৩৭৯ মানুষের প্রাণ, আহত হয় তারও বেশি। ময়দানের পাশেই ছিল একটি কুয়ো। কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে অসহায় মানুষ। তাদেরকে কুয়োর মধ্যে পাথরচাপায় হত্যা করে ডায়ার বাহিনী। দু’দিন পরে, ১৫ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিমান ব্যবহার করা হয়। ফলে সেদিন আরও ১২ জন প্রাণ হারায়, আহত হয় আরও শতাধিক।
বক্তারা আরও বলেন, ইতিহাস ব্রিটিশদের ক্ষমা করেনি। সভ্যতার ইতিহাসে ব্রিটিশদের এই নির্মম গণহত্যা একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। জেনারেল ডায়ার একজন খুনি হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার প্রায় এক শতাব্দী পর ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে এসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘এটি ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন ব্রিটিশদের দেয়া নাইটহুড সম্মান। ব্রিটিশদের প্রদত্ত সম্মাননা তাদেরই মুখে ছুড়ে মারা চরম অপমানের, পরিষ্কার অর্থে ব্রিটেনের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখানো। ইতিহাসে জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষে নিহতদের প্রতি রইল আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
উক্ত আলোচনা সভা পরিচালনা করেন এডভোকেট বনন সরকার রনি, এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্রফ্রন্ট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নওশিন আরা আহমেদ, যুবমৈত্রী দক্ষিণ সভাপতি আলমগীর হোসেন রুমেল। এছাড়াও ছাত্র, যুব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেত্রবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।