সুরমা ফুঁসছে, সিলেট নগরে ঢুকছে পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
ঢল কমায় সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে; পানি ঢুকছে সিলেট নগরে। গতকাল ভোররাত থেকে একাধিক ছড়া ও খাল দিয়ে নগরের ভেতরে পানি প্রবেশ করে। আর সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি ঢুকছিল বলে জানিয়েছেন সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। এতে করে ৫টি ওয়ার্ডের কমপক্ষে ১৫টি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার বাসা-বাড়ির নিচতলা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। সন্ধ্যায় সিলেট নগরে সুরমার পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মূলত সুরমা নদীর পানি উপচে নগর প্লাবিত হয়েছে। দিনভর পানি ডেঞ্জার জোনের কাছাকাছি ছিল।
সন্ধ্যায় সেটি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তিনি জানান- কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন এলাকার পানি নিচের দিকে যাচ্ছে। এ কারণে নগর এলাকায় পানি ঢুকেছে। যদি ভারতের মেঘালয়ে আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে হয়তো নিম্নাঞ্চলের দিকে পানি চলে যাবে। গতকাল বিকালে সিলেট নগরের সুবহানীঘাট, উপশহর ই-ব্লক, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, মেন্দিবাগসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে; সুরমা নদী তীর উপচে পানি ঢুকছে সিলেট নগরে। নগরের মধ্যখান সুবহানীঘাট পর্যন্ত চলে এসেছে পানি। অর্ধশতাধিক পাড়ার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারধ করেছে।
বিকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিসুর রহমান কামরানসহ নগর কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র সাংবাদিকদের বলেছেন; নগরের ১৫নং ওয়ার্ড ও ২৪নং ওয়ার্ডে দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে নিচু এলাকায় বসবাসকারী শতাধিক মানুষ উঠেছেন। তাদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র জানান- পানি যদি না বাড়ে তাহলে শঙ্কার কিছু নেই। পানি বাড়লে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো এবং তাদের মধ্যে খাবার বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এদিকে- গতকাল সকালে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর-গাছবাড়ি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে; উজানের ঢলের তোড় এখনো রয়েছে। বিশেষ করে বড়গাঙ্গের পানি এসে ঢুকছে বড় হাওরে। এ কারণে হরিপুর-গাছবাড়ি সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ সড়কের কোথাও কোমর, আবার কোথাও সাঁতার পানি। ওই অংশের মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয় সুমন আহমদ জানিয়েছেন- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ সড়কের উপরে পানি উঠতে শুরু করে। বিকালের মধ্যে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায় এ সড়ক। এজন্য সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সিলেট-সালুটিক-গোয়াইনঘাট সড়কে এখনো হাঁটু পরিমাণ পানি। ঢলের তোড়ে ওই সড়কের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল বিকালে সড়ক পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন- গত তিন দিনের আকস্মিক বন্যার পানির স্রোতে যেসব সড়ক ভেঙে গেছে সেগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। যেসব ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামত করা হবে। এখনো যারা পানিবন্দি রয়েছেন তাদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ১৩টি ইউনিয়নে খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেটের উজানে সুরমা অববাহিকার পানি কমলেও নতুন করে কুশিয়ারা অববাহিকার পানি বেড়েছে। এ কারণে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন- অমলসীদ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ২ মিটার ও কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় ২০-২৫টি এলাকা জুড়ে তীর উপচে পানি ঢুকেছে। এসব স্থানে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন- যদি বৃষ্টি থামে তাহলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পানি দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাবে। সিলেটের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- জেলার ৬টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়ন গতকাল পর্যন্ত বন্যায়কবলিত হয়েছে। ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ বসবাস করছে। তাদের জন্য শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে সিলেটে বৃষ্টি কমেছে। একই সঙ্গে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি কমে এসেছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে হয়তো আর ঢল নাও নামতে পারে।