পুত্রশোকে পরপারে মা, কাঁদছে গ্রামের স্বজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল কিশোর। পরদিন রাতে খালে পাওয়া যায় মরদেহ। তবে এর ঘণ্টা কয়েক আগেই পুত্রশোকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মা। গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার ডেমরা এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর এলাকার পূর্ব সদরদী বাস্তখোলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
পূর্ব সদরদী বাস্তখোলা পড়েছে ভাঙ্গা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই গ্রামের ফরহাদ হোসেন মোল্যা পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার ডেমরা থানাধীন সারুলিয়া এলাকায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত ফরহাদ। তাঁর ছেলে হাসিব মোল্যা ওই এলাকার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
পারিবারিক সূত্র জানায়, হাসিব মোল্যা বৃহস্পতিবার সকালে ডেমরার সারুলিয়ার বাসা থেকে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য বের হয়। সেদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ফেরেনি সে। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় নিখোঁজ ছেলের শোকে মারা যান মা হেলেনা বেগম।
একইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরার একটি খাল থেকে হাসিবের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একদিকে কিশোর ছেলের লাশ উদ্ধার, অন্যদিকে মায়ের মৃত্যুর সংবাদে হাসিবের পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। শোকের ছায়া নেমেছে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও।
শনিবার বিকেলে ভাঙ্গার সদরদীতে হাসিবের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনের কেউই কথা বলায় অবস্থায় নেই। এরই মাঝে তার মেঝ কাকা মো. বিপ্লব মোল্যা অভিযোগ করেন, তাঁর ভাতিজা হাসিবকে বন্ধুরা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। পরে লাশ খালে ফেলে রাখে তারা। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
দীর্ঘদিন ধরে ছেলে ফরহাদ পরিবার নিয়ে ডেমরায় থাকেন বলে জানান হাসিবের দাদী লিলি বেগম। তিনি বলেন, তিন বোনের একমাত্র ভাই হাসিব। বড় আদরের ছিল। তার মৃত্যুর সংবাদে তাদের সবাই ভেঙে পড়েছেন। তিনিও এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে কঠোর বিচার দাবি করেন।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম শনিবার সমকালকে বলেন, সংবাদ পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি খাল থেকে হাসিবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ হাতে পেয়েছেন। এতে দেখা গেছে, হাসিবসহ তিন বন্ধু বোতল নিয়ে ঘুরছে। তাদের ধারণা, এতে মাদক ছিল। পরে একটি বাড়িতে ঢুকে তিনজন মদপান করে। রাতেই কাউকে না বলেই বাড়িটি থেকে বের হয় হাসিব। পরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে একটি ব্রিজে বসে। সেখান থেকে খালের পানিতে পড়ে থঅল মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে ওই কিশোরের মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। আপাতত থানায় অপমৃত্যুর (ইউডি) একটি মামলা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে হত্যার আলামত পেলে মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তর করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে শনিবার রাত ১০টার দিকে জানা গেছে, হাসিব ও তার মা হেলেনা বেগমের মরদেহ ডেমরার একটি কবরস্থানে রাতেই পাশাপাশি দাফন হবে। ইতোমধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে হাসিবের লাশ ঢামেক থেকে বুঝে পেয়েছেন তারা।