স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য হাহাকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
বছরখানেক আগে কেয়ার গিভার ভিসায় যুক্তরাজ্যে যান সিলেটের মাহমুদুল হাসান। প্রথম কয়েক মাস কাজ করে ভালোই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ মাস কোনো কাজ নেই; তিনি এখন বেকার। চরম কষ্টে দিনাতিপাত করা এই যুবক বলেন, ‘আমি কাজের পারমিট নিয়ে এসেছি। কিন্তু কোনো কাজ নেই। পাঁচ মাস ধরে হন্যে হয়ে রেস্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন, এগ্রিকালচার সাইটে কাজ খুঁজেও পাইনি। একটি এজেন্সির মাধ্যমে লন্ডনে এসে দেখি, এখানে তাদের কোনো অফিস নেই। লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্বপ্নের দেশে এসে না পারছি সইতে, না পারছি কাউকে কিছু বলতে।’
একই অবস্থা রওনক হোসেনেরও। স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তিনি। সিলেটের এই তরুণ জানান, তাঁর দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ হয়েছে। আগে কাজ করে সেমিস্টার ফি যুগিয়েছেন। কিন্তু এখন কাজ নেই। তৃতীয় সেমিস্টার আসন্ন। কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।
উন্নত জীবনের আশায় সাম্প্রতিক সময়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে গিয়ে সিলেটের অনেকে মাহমুদুল ও রওনকের মতো কষ্টে দিন পার করছেন। ব্রিটেনে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ১১ পাউন্ড ৪৪ পয়সা। কিন্তু সেখানে ঘণ্টাপ্রতি ৫ পাউন্ডেও কাজ পাচ্ছেন না অনেক বাংলাদেশি। ভিটেমাটি বিক্রি করে যুক্তরাজ্যে যাওয়া কেউ কেউ কাজ না পেয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪ হাজার ১০৭ জন দক্ষ কর্মী যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন খাতে চাকরি পেয়েছেন, যা এক বছরে সর্বোচ্চ। তাদের অধিকাংশই গেছেন কেয়ার গিভার, গৃহকর্মী ও হসপিটালিটি কর্মীর ভিসায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানান, তিনি কেয়ার গিভার ভিসায় পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যে গেছেন। ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি তাঁকে বার্ষিক ২১ হাজার পাউন্ডের (২৯ লাখ টাকা) বিনিময়ে লন্ডন নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেকার। নিজের যা আছে তা দিয়ে কোনোরকম দিন কাটাচ্ছেন। তার মতো আরও অনেকে কষ্টে দিন পার করছেন। কাজের কথা বলে বিদেশ পাঠিয়ে কাজ দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য তিনি কনসালট্যান্ট কোম্পানিগুলোকে দায়ী করেন।
জানা গেছে, গত তিন বছরে ছাত্র ও কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন সিলেটের কয়েক হাজার মানুষ। তাদের বড় অংশই বসবাস করেন রাজধানী লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়। দেশটির মধ্য লন্ডনে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ থাকলেও, সেখানেই কাজ পাচ্ছেন না অনেকে। ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাজের জন্য হাহাকার। পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মিলছে না কাজ।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যারা লন্ডনে গেছেন তাদের থাকার জায়গা ও কাজ দেওয়া নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে ভাড়া নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। সেখানেও তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বিভিন্ন ভিসায় যারা গেছেন, তারাও নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।
লন্ডন থেকে গণমাধ্যমকর্মী দেওয়ান বেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ফোন পাই, যারা অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। দেশ থেকেও অনেক স্বজন তাঁর সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখার কথা বলছেন। দেখেশুনে না আসায় এমনটি হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য এখনও সেভাবে অর্থনৈতিক মন্দাভাব কাটাতে পারেনি।
সিলেটে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র সভাপতি ফেরদৌস আলম বলেন, স্টুডেন্ট ভিসা সহজ করায় সম্প্রতি অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গেছেন। আর যারা কাজের ভিসায় গেছেন, তাদের অনেকেই প্রশিক্ষিত নয়। যেসব এজেন্সি তাদের নিয়ে গেছে, তারাও সঠিক পন্থা অবলম্বন না করায় বিদেশের মাটিতে গিয়ে
অনেকে বিপাকে পড়েছেন। এ জন্য তিনি ‘পথেঘাটে’ গড়ে ওঠা এজেন্সিগুলো থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।সুত্র-সমকাল