সিলেটে সামাদ পরিবারে ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
সিলেটের সামাদ পরিবার। এক নামেই পরিচিত। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পরিবার। মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যুর পর এ পরিবারের কেউ রাজনীতিতে আসেননি। তবে ফেঞ্চুগঞ্জসহ সিলেট-৩ আসনের মানুষের কাছে এখনো নির্ভরতার জায়গা সামাদ পরিবার। আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা মাহমুদ উস সামাদের নামেই এলাকায় রাজনীতি করছেন। মরহুম রেজা সামাদ চৌধুরী (আরএস চৌধুরী) প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বড় ভাই। আরএস চৌধুরী ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তার পরিবার ফেঞ্চুগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে নানা অবদান রেখেছেন। ফেঞ্চুগঞ্জের পিপিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন আরএস চৌধুরীর নামে ছিল।
সিমেন্ট দিয়ে খোদাই করে ভবনের উপরে আরএস চৌধুরীর নাম ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এই নাম কে বা কারা মুছে দিয়েছে। এ নিয়ে সামাদ পরিবারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চেয়েও সদুত্তর পাননি। এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সামাদ পরিবারে। গতকাল আরএস চৌধুরীর ছেলে হাসান উস সামাদ চৌধুরী সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবিও জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মরহুম আরএস চৌধুরীর ভাই লন্ডনের চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, শহীদ উস সামাদ চৌধুরী, শামসুল হক চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসান উস সামাদ চৌধুরী ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ পুরানবাজারে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পিপিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন আরএস চৌধুরী। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে গেছেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ওই স্কুলে সরকারি অর্থায়নে একটি ভবন নির্মাণ করেন এবং ওই ভবনের নামকরণ করা হয় আরএস চৌধুরীর নামে। ভবনটির উপরের দিকে বড় করে ‘আরএস চৌধুরী ভবন’ লিখা ছিল। এই নামেই ভবনটি চলে আসছিল। তিনি জানান, সম্প্রতি কে বা কারা স্কুলের ভবন থেকে আরএস চৌধুরী নামটি মুছে ফেলে। ২১শে জানুয়ারি হঠাৎ করে স্থানীয়রা সেটি দেখতে পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ শুরু করেন। আর বিদেশে থেকে এ ন্যক্কারজনক ঘটনার খবর পেয়ে তারাও হতভম্ব হয়ে যান। হাসান উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জের সামাদ পরিবারের পরিসর বড়। সবাই প্রবাসে বসবাস করেন। বিষয়টি জানার পর একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে দেশে অবস্থান করা চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, শহীদ উস সামাদ চৌধুরী বিষয়টি মাইজগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জুবেদ আহমদ চৌধুরীকে অবগত করেন। এবং একই সঙ্গে তারা এর সূরাহাও দাবি করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সামাদ পরিবারকে কোনো কিছু অবগত করা হয়নি। তিনি দাবি করেন- প্রতিষ্ঠানের ভবনে থাকা আরএস চৌধুরীর নাম মুছে ফেলায় স্থানীয় অভিভাবকসহ সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘পুরনরায় আরএস চৌধুরী ভবন নামে ভবনের নামকরণ করার দাবি জানাই।’ সংবাদ সম্মেলনে হাসান উস সামাদ চৌধুরীর ভাই এহসান উস সামাদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিহাম উস সামাদ চৌধুরী, চাচাতো ভাই মুশফিক উস সামাদ চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাকিব উস সামাদ চৌধুরীও ছিলেন। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি বলেছেন, ‘কেন নামকরণ মুছে ফেলা হলো এ ব্যাপারে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হলো। ভবনের নাম আরএস চৌধুরী ভবন নামে রাখার জন্য দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
এদিকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জুবেদ আহমদ চৌধুরী শিপু জানিয়েছেন, ‘কবে নামকরণ করে নাম বসানো হয়েছে আর কবে সেটি মুছে ফেলা হয়েছে; এর কিছুই জানি না। কারণ এখনো ওই ভবনটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সমঝে দেয়া হয়নি। ঠিকাদার এতদিন ভবনে কাজ করছিলেন। ঠিকাদারের অনুমতি নিয়ে তারা কেবল একটি কক্ষে পাঠদান চালাচ্ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিষয়টি জানার পর তিনি বিদ্যালয়ের রেজুলেশন বই চেক করেন। সেখানে কোথাও ভবনের নামকরণ করার কোনো তথ্য পাননি। এ ছাড়া- যে দপ্তর ভবনটির নির্মাণে টাকা দিয়েছে তাদের কাছ থেকেও নামকরণের প্রস্তাবনা পাননি। ফলে নামকরণের বিষয়টি নিয়ে তিনি সঠিক তথ্য জানেন না বলে মন্তব্য করেন।’