আলোচনায় সিলেটের হকার ইস্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ৮:১৪ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
নগর পিতার দায়িত্ব নিয়ে সিলেটে প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সেটি হচ্ছে; হকার সমস্যার সমাধান। ক’দিন আগে অন্যতম প্রধান এ সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এরপর মেয়র আনোয়ারুজ্জামান তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন এক মাসের সময়। বলেছেন; এক মাসের মধ্যে হকার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। এ নিয়ে তিনি হকারদের সঙ্গে বসেছেন। আলোচনা করেছেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কী পথ খুঁজছেন মেয়র- সেটি এখন দেখার বিষয়।
হকার নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটে হকার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রয়েছে প্রায় ১৬শ’ হকার। কিন্তু বাস্তবে নগরে হকারের সংখ্যা হবে প্রায় ৫ হাজার। প্রায় দুই বছর সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরের ফুটপাথ থেকে হকারদের সরাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কিন্তু আরিফ ব্যর্থ হয়েছেন। হকাররা তার কথা রাখেননি। এ কারণে হকাররা লালদিঘীরপাড়ের হকার্স মার্কেটের খোলা জায়গা থেকে সরে ফের রাজপথে এসেছেন। দু’বছর ধরে টানা তারা ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এবার মেয়রের সঙ্গে হকাররা বৈঠক করে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে হচ্ছে; লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটে জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। হকার মার্কেটে যাতায়াতের জন্য কুদরত উল্লাহ মসজিদের পাশ দিয়ে, সার্কিট হাউস এবং পাইলট স্কুলের ভেতর দিয়ে তিনটি রাস্তা বের করতে হবে। পাশাপাশি লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠে বালু ভরাট করে টিনশেডের স্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দিতে হবে। তাদের এ দাবি নিয়ে খোদ বিব্রত নগর ভবনের কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন- ফুটপাথ ও রাস্তা থেকে হকার সরাতে হলে আগে তাদের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। তাদের দাবি পূরণ করা অনেকটা অস্বাভাবিক। কারণ লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের খোলা মাঠ বালু ভরাট ও টিনশেড নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু তিনটি স্থান দিয়ে রাস্তা বের করা খুবই কষ্টসাধ্য। কুদরত উল্লাহ মসজিদের পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ত বের করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু সার্কিট হাউস ও পাইলট স্কুলের পাশ দিয়ে রাস্তা বের করা কষ্টকর। এ দু’টি জায়গা খুবই স্পর্শকাতর। একটি হচ্ছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অপরটি ভিআইপি জোন। সুতরাং হকারদের দাবি শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে না। ফলে এ নিয়ে ভাবছেন নগরের মেয়র সহ কর্মকর্তারা। সিলেট নগরীর সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে চর্তুদিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হকার আর হকার। সিটি পয়েন্ট থেকে ক্বীন ব্রিজের মুখ, তালতলা পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তায় দু’পাশে হকারদের দৌরাত্ম্য। সিটি পয়েন্ট থেকে ধোপাদিঘীরপাড়, সিটি পয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রাস্তায় শত শত হকার বসে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে সিটি সুপার মার্কেটের সামনে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে রাস্তায় মাছ বাজারও বসে। গত এক মাসে সিলেটে হকার সমস্যা ব্যাপক ভাবে বেড়েছে। এ কারণে বেড়েছে যানজটও।
হকাররা জানিয়েছেন- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বাইরের জেলা থেকে কাজের সন্ধানে অনেকে সিলেটে এসে হকার হয়ে রাস্তায় ব্যবসা করছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে সবজি ও কাপড় বিক্রেতা। মেয়রের পুনর্বাসন ঘোষণায় নগরের মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, উপশহর সহ কয়েকটি এলাকা থেকে হকাররা সিটি পয়েন্ট ও তার আশপাশের এলাকায় চলে এসেছে। এ কারণে কোর্ট পয়েন্ট থেকে আম্বরখানা পর্যন্ত সড়ক হকারদের দখলে। হকার বেড়ে যাওয়ার কারণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা হাঁটা-চলাও দায় হয়ে পড়েছে। ফলে এ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নগরের যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে। নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, করিম উল্লার সামন, ধোপাদিঘীরপাড়, তালতলা এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। রাস্তা হকারদের দখলে থাকার কারণে সিলেটে যানজট সমস্যা প্রকট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
নগরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সবার সঙ্গে একদফা কথা হয়েছে মেয়রের। এখন সমিতিভুক্ত হকারদের আপাতত হকার্স মার্কেট মাঠে নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। ওদেরকে হকার্স মার্কেট মাঠে নিয়ে যেতে পারলে তারা ভ্রাম্যমাণ হকার থাকবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে সরানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। হকার যাতে না বসতে পারে সেজন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।