সিলেট জাপায় যে নাটকীয়তা
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২:৫৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সিলেটের ৬টি আসনেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। দলের মহাসচিব
আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪ জন প্রার্থী। দুই আসনের কোনো প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াই এ দুই আসনে নৌকার প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। এ দুটি আসন হচ্ছে সিলেট-১ ও সিলেট-৪। প্রার্থী সংকটে থাকার কারণে জাতীয় পার্টি দুটি আসনে বিকল্প প্রার্থীও খুঁজে পায়নি বলে দলের কর্মীরা জানিয়েছেন। সিলেট-১ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুলকে। বাবুল গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে ৫০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এবার তিনি নিজ এলাকা সিলেট-৩ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবুলকে তার চাহিদামতো আসনে মনোনয়ন না দিয়ে তাকে সিলেট-১ আসনে তার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
নজরুল ইসলাম বাবুল গতকাল বিকালে জানিয়েছেন; ‘সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার সঙ্গে নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার নেই। এ কারণে আমি মনোয়নপত্র জমা দেইনি। যদি আমার সমবয়সী কোনো রাজনীতিবিদ প্রার্থী হতেন তাহলে আমি প্রার্থী হতাম।’ তিনি বলেন- ‘সিলেট-৩ আসনে আমার বাড়ি। সেখানে মনোনয়ন পেলে আমি লড়াই করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমাকে সেখানে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।’ সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমানকে। তিনি এবার সিলেট-৬ ও সিলেট-৫ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে দুটি আসনের কোনোটি না দিয়ে অন্য একটি আসনের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ আসনে তাজ রহমান বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তেমন ভোট পাননি। এ কারণে তিনি আগে থেকেই নিজের এলাকায় মনোনয়ন চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু দল তার আবদার মেনে নেয়নি।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- তিনি যে দুটি আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সেগুলোতে তাকে প্রার্থী করা হয়নি। এ কারণে তাকে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। দল চাইলে অন্য কাউকে এ আসনে প্রার্থী দিতে পারতো।’
এদিকে সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি মকসুদ ইবনে আজিজ লামার নাম ঘোষণা করেছিল। কিন্তু নাম ঘোষণার দিন রাতেই মকসুদ ইবনে আজিজের পক্ষ থেকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয়া হয়। বিষয়টি তিনি ওইদিন রাতেই জানিয়ে দেন দলের নীতিনির্ধারকদের। এরপর এ আসনে প্রার্থী বদল করে সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়। গত নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী ছিলেন এহিয়া। কিন্তু তিনি তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ভোটের হিসেবে তার অবস্থান ছিল চার নম্বরে।
মকসুদ ইবনে আজিজ লামা জানিয়েছেন- আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে সায় দেয়া হয়নি। এ ছাড়া বয়সও হয়ে গেছে। এই বয়সে দৌড়ঝাঁপ করা কষ্টকর হবে। এ কারণে মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করেই অন্য কাউকে দেয়ার প্রস্তাব রাখি। পরে দল হয়তো একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ গ্রুপের সিলেটের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান চৌধুরীও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে তিনি জাতীয় পার্টি বলে মনোনয়ন দিলেও দলের কোনো কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। সিলেটে এবার জাতীয় পার্টিতে রওশনপন্থি নেতারাও নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এরমধ্যে সিলেট-২ আসনে ছিলেন মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনে মুজিবুর রহমান ডালিম, সিলেট-৫ আসনে জাকির হোসেন। কিন্তু রওশন এরশাদ বলয় নির্বাচনে না যাওয়ায় সিলেট-৪ আসনে মুজিবুর রহমান ডালিম ও সিলেট-৫ আসনে জাকির হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেননি। সিলেট জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ বলয়ের নেতা মুজিবুর রহমান ডালিম জানিয়েছেন- আমাদের নেত্রী রওশন এরশাদ। তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তিনি নিজেও নির্বাচন করছেন না। আমরাও নির্বাচনে নেই। অন্য কোথাও থেকে মনোনয়ন এনে নির্বাচন করার ইচ্ছা বা খায়েস আমাদের কারও নেই। এ কারণে আমরা মনোনয়নপত্র জমা দেইনি।সুত্রঃ মানবজমিন