সিলেটে বাড়িছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২২:১২,অপরাহ্ন ০৫ নভেম্বর ২০২৩
সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এখন বাড়িছাড়া। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এমনকি নগরে প্রকাশ্যে আসছেন না তারা।
বিএনপি’র নেতাদের দাবি, কর্মসূচিতে দেখা মাত্রই গুলি করা হচ্ছে। আর নগরে জরুরি প্রয়োজনে বের হলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশিও করা হচ্ছে। এ কারণে বাড়িছাড়া সিলেট বিএনপি’র শত শত নেতাকর্মী। তারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি অন্তত দুই হাজার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৫ জনকে।
এতে করে বিএনপি’র কর্মীরাও পর্যন্ত বাড়িছাড়া বলে জানান তারা। ২৮শে অক্টোবর সিলেট থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গিয়েছিলেন ঢাকার সমাবেশে। এ সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেটের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, নগর বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। মামলার আসামি হলেও ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে সিলেটে ফিরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচিতে তারা সক্রিয় হয়েছেন। হরতালের দিন থেকেই সিলেটের রাজপথে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি সংঘবদ্ধ অবস্থায় না থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে জেলা ও মহানগর সহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্য কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তারা কখনো পুলিশের সঙ্গে, আবার কখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এতে মামলা হচ্ছে তাদের ওপর।
সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১২টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে নগর ও জেলায় সমান সমান মামলা হয়েছে। এসব মামলার কোনো কোনোটিতে নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। আবার কোনো কোনোটিতে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এতে করে এখন ধরপাকড়ে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে তাদেরকে অজ্ঞাত আসামি রাখা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করছে। তিনি দাবি করেন- সিলেটে দায়ের করা মামলায় ২ থেকে ৩ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৫ জনকে। সিলেট মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস জানিয়েছেন, মামলা হয়ে তো শেষ নয়। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে পুলিশ। নেতাদের না পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কখনো পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন- অব্যাহত মামলা দায়েরের পর সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া রয়েছেন। রাতে কেউ বাসা কিংবা বাড়িতে থাকেন না। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়ালেও নেতারা কর্মসূচি পালনে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান তিনি। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে যুবদলের ডাকা হরতাল চলাকালে ছাত্রদল ও শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ নেতা ইমন আহমদ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কল্লোল বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। ছাত্রলীগ নেতার মামলায় এজাহার নামীয় ১৪ জন এবং অজ্ঞাত ৫০-৫৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে ২৯শে এপ্রিল সিলেটে হরতালে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলা ও নগর পুলিশে ৯ মামলা করা হয়েছিল। গত ২৯ ও ৩০শে নভেম্বর এসব মামলা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনা কোতোয়ালি থানায় আটকদেরসহ হামলাকারীদের নামোল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। অপরটি এক ছাত্রলীগ নেতার মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনায় ওই ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ছাড়া জালালাবাদ থানায় পুলিশ এসল্টের ঘটনায়, এয়ারপোর্ট থানায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এবং দক্ষিণ সুরমা থানায় সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় জননিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এইসব মামলায় এজাহার নামীয় ৬৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪৭০ জনসহ আসামি করে মামলা করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতা। জেলার গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর থানায় পৃথকভাবে পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জানান, নতুন করে বিশ্বনাথ সহ আরও দুটি উপজেলায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে।