ডাকাতকে খুঁজছে সিলেটের পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩২:৩৬,অপরাহ্ন ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হঠাৎ করেই সিলেট নগরের দক্ষিণ অংশে ডাকাতি বেড়ে যায়। পর পর দুটি ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দেয়। মুখোশ পরে হানা দিচ্ছে ডাকাতরা। আগ্নেয়াস্ত্রও প্রদর্শন করছে। এই অবস্থায় পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। গত সোমবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নগরের কাজিরবাজার এলাকা থেকে চিহ্নিত দুই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের ধারণা; ডাকাতরা সিলেট নগর কিংবা আশপাশ এলাকাতেই ঘাঁটি গেড়েছে। এজন্য লুকিয়ে থাকা ডাকাতদের খোঁজে অভিযান চলছে।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই ডাকাতদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। চলতি সেপ্টেম্বরে সিলেটে অপরাধের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে।
হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার কারণে গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে নেমেছে। একই সঙ্গে চলছে প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানও। তবে- পুলিশের তৎপরতার কারণে গত দু’দিনে সিলেটে কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত ১১ই সেপ্টেম্বর সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার গোপশহর এলাকার খানবাড়িতে হানা দেয়ে ১০ থেকে ১২ জনের একটি ডাকাতদল।
এ সময় তারা বাড়ির সবাইকে বেঁধে ও নির্যাতন চালিয়ে মালামাল লুটে নেয়। ডাকাতদের হামলায় গোপশহরের ৩ বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ১৪ই সেপ্টেম্বর গভীর রাতে একই উপজেলার সিলাম এলাকায় টিকরপাড়ায় বাসার গেট ভেঙে এক কুয়েত প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মুখোশ পরা ডাকাতদল বাড়ির ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। ঘরের লোকজনকে বেঁধে একটি টিভিএস মোটরসাইকেলসহ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে চলে যায়।
দক্ষিণ সুরমায় ডাকাতির ঘটনার বাইরে নগরীর ক্বীনব্রিজ এলাকায় স্বর্ণ লুট কাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে কয়েকজনকে। ১০ই সেপ্টেম্বর নগরের উত্তর অংশের তালতলা এলাকা থেকে প্রবাসীকে অপহরণ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে নগরীর কোয়ারপার এলাকা থেকে ওই সৌদি প্রবাসীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে মোটরসাইকেল ও টাকা উদ্ধার হয়নি।
১২ই সেপ্টেম্বর বালুচর এলাকায় এক ফ্রিল্যান্সারের ওপর হামলা চালিয়ে ১৮ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ করে ডাকাতি ও অপরাধের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডি’র কয়েকটি টিম ডাকাত ধরতে মাঠে নেমেছে। এরইমধ্যে মিলেছে সাফল্যও। চিহ্নিত দুই ডাকাতকে গত সোমবার রাতে নগরীর কাজিরবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে বাটন নামে চিহ্নিত এক ডাকাত ২৫ মামলার আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কাড়ুয়া গ্রামের ইদ্রিছ আলীর ছেলে ফজর আলী ওরফে বাটন ও একই জেলার লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামের বুল্লা এলাকার শহিদ মিয়ার ছেলে মো. লুৎফর রহমান। মোগলাবাজার থানার ওসি মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ফজর আলী ওরফে বাটনের বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় ডাকাতিসহ ২০টি মামলা রয়েছে। আর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। দুইজনই চিহ্নিত ডাকাত।
পুলিশ জানায়- গত ১৩ই সেপ্টেম্বর ভোররাত ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামের ইসতেখার গণি তাজেলের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। বসতঘরের প্রধান ফটকের তালা ও ঘরের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ১০-১২ জন ডাকাত ঘরে ঢোকে। পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নেয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর পর ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার চার দিনের মাথায় এ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে- গ্রেপ্তারকৃতরা সিলেটের সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে- সাধারণত বর্ষা ও শীত মৌসুমে সিলেটে ডাকাতির প্রবণতা বেড়ে যায়। বাইরে থেকে আসা ডাকাত দলের সদস্যরা বাসা ভাড়া নিয়ে নগরে ঘাঁটি পাতে। এরপর পর পর কয়েকটি ডাকাতি করে তারা সিলেট থেকে পালিয়ে যায়। এবারের ঘটনা বাইরে থাকা ডাকাতরা সিলেটে ঘাপটি মেরে থেকে ঘটাচ্ছে বলে ধারণা পুলিশের।