সিলেটে রাস্তা ড্রেন উন্নয়ন: ১৫ হাজার কোটি টাকার ভূমি দান করেছে নগরবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:১৬ অপরাহ্ণ
১০ বছর ধরে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রথম দু’বছর কারাগারে থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। এই সময়ে মেয়রের কাছে চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল উন্নয়ন কাজ। বিশেষ করে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হয়েছে মেয়রকে। তবে এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নগরের মানুষ।
নগরের পুরাতন ২৭ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা উন্নয়ন কাজে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ভূমি দান করেছেন। তারা ভূমি দান করার কারণে নগরের রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নিরাপদে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। ২০ হাজারের মতো বাসিন্দা ও প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে এ ভূমি দান করেন। আর ভূমি নিতে গিয়ে কখনো কখনো বিতর্কিত হয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। তবে এতে তিনি পিছু হটেননি।
বরং নগরবাসীর স্বার্থে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভূমি নিয়ে আসেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সম্প্রতি সিলেটের একটি অনুষ্ঠানে এই ভূমিদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অধিগ্রহণ ছাড়াও বিনামূল্যে সিলেট নগরের বাসিন্দারা এই ভূমি দান করেছেন। এ কারণে একদিনের জন্য সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। পূর্ণ গতি নিয়ে আমরা উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছি। এদিকে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মেয়াদের শেষ দিকে এসে এই ভূমিদাতাদের অবদানকে ভোলেননি। তার নির্দেশনায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ভূমিদাতাদের একটি তালিকা করা হয়েছে।
এই তালিকা প্রস্তুতকারী এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নগরের পুরাতন ২৭ ওয়ার্ডের সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেন নির্মাণ, বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানোসহ স্থাপনা নির্মাণে নগরের বাসিন্দারা নিজেদের ভূমি দান করেছেন। নগরের ব্যস্ততম জিন্দাবাজারের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসারীরা বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নিতে মার্কেটের ভেতরে জায়গা দিয়েছেন।
নয়াসড়কের খ্রিস্টান মিশন, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চৌহাট্টার মহিলা কলেজ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বাড়ির জমি দিয়েছেন। অনেকেই আবার বাসাবাড়ির দেয়াল ভেঙে ড্রেন নির্মাণের জন্য ভূমি দিয়েছেন। এই ভূমি পাওয়ার কারণে নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এবার কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি। এ ছাড়া- সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির মালিকরা ভূমি ছেড়ে দেন। ওই এলাকার কাজ এখনো চলমান। সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ওই ভূমিগুলো তাৎক্ষণিক দেন নগরের বাসিন্দারা।
এ কারণে চলমান কাজে কোনো দীর্ঘসূত্রীতা হয়নি। ইতিমধ্যে ভূমি যারা দান করেছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। অনেকেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। সেটি নির্ণয়ের জন্য কাউন্সিলরদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আপাতত নগরের ২৭ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছে সাড়ে ১৩ হাজার সনদ দেয়া হয়েছে। লাগলে পরে আরও দেয়া হবে। এদিকে- নগরের সড়ক সম্প্রসারণ, ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিনামূল্যে নিজস্ব ভূমিদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমিদাতাদের ‘সনদ প্রদান’ কার্যক্রম শুরু করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
শনিবার রাতে সিসিক’র ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে উপস্থিত ভূমিদাতাদের হাতে সনদ তুলে দেন তিনি। ভূমিদাতের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকার ভূমি স্বেচ্ছায় সিলেট সিটি করপোরেশনকে দান করেছেন নাগরিকরা। কেউ ভূমির মূল্য দাবি করেননি। জীবনমান উন্নয়নের স্বার্থে দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে নগরবাসী বিনামূল্যে ভূমি দান করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সিলেটবাসীর ভূমিদানের দৃষ্টান্ত স্বর্ণাক্ষরে খচিত থাকবে সিলেট সিটি করর্পোরেশনের অগ্রযাত্রায়। মেয়র বলেন, সিলেটের জনচলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়ক প্রসস্থকরণ, ড্রেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু নগরের সরু সড়কগুলোর পাশে সিটি করপোরেশনের বা সরকারের কোনো জমি ছিল না। সড়কের দুপাশের বেশিরভাগ ভূমিই ব্যক্তি মালিকানার। ফলে সড়ক প্রশস্ত করতে সরকারের আইনানুযায়ী ভূমি ক্রয় করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। যদিও ভূমি ক্রয় একটি জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। সেইসঙ্গে ভূমি ক্রয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সংস্থান নিয়ে সংকটে পড়ে সিসিক। সে সময় সিলেট নগরের দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। এগিয়ে আসেন সিলেটের নগরবাসী। নগর উন্নয়নে স্বেচ্ছায় নিজস্ব ভূমিদানের মতো ইতিহাস রচনা করেন।