দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের আদি-অন্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:৫০ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ। যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ ১২ বার বার্ষিক অর্থ বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয়বাদী দলের একজন নেতা ছিলেন যিনি সর্বোচ্চ সময়কালীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
এম. সাইফুর রহমান ৬ অক্টোবর ১৯৩২ সালে তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার সদর উপজেলার বাহারমর্দ্দন গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন । তার শিক্ষানুরাগী পিতা আব্দুল বাছিত একজন পেশাদার শিক্ষক ছিলেন এবং তার শিক্ষানুরাগী মাতা তালেবুন্নেসা। পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। মাত্র ছয় বছর বয়সে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তার শিক্ষাবিদ পিতা। তিন পুত্রকে নিয়ে দু’চোখ অন্ধকার দেখেন সাইফুর রহমানের জননী বেগম তালেবুন্নেসা। বালক সাইফূর রহমানের পরিবারের এই কঠিন সময় ও ক্রান্তি কালে শিক্ষানুরাগী চাচা মো: সফি আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসেন। নিজ সন্তানের মতই তিন এতিম ভ্রাতুষ্পুত্রের শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। তিনি তার চাচা মোহাম্মদ সফির তত্বাবাধানে বড় হয়েছেন।
সাইফুর রহমান শিক্ষাজীবন শুরু করেন মৌলভীবাজার সরকারি হাই স্কুল থেকে। তিনি ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন জগৎশি গোপালগন্জ ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এর পর তিনি ভর্তি হন সিলেটের মুরারীচাঁদ (এম সি) কলেজে। ১৯৫১ সালে মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি লন্ডনে পড়াশুনা করেন (আই সি এ ই ডাব্লিউ) থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সি এ) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। তিনি আর ও শিক্ষা গ্রহন করেন আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতি বিশেষায়িত নিয়ে। ১৯৬২ সালে পেশাজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
সাইফুর রহমান ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় যুগ দেন ছাত্র রাজনীতিতে এবং নতুন জীবনের সন্ধান পান। তিনি সলিমুল্লাহ হল ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন-বাঙালি জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের চেতনার উন্মেষ ঘটায়। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় কৃষ্টি সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য-শায়ত্ত শাসন ও স্বাধিকার এর প্রশ্নটিও নিহিত ছিল। এ আন্দোলনের এক নেতা হিসাবে আবিভূত হয়েছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি গ্রেফতার হয়ে এক মাস কারাবরণ করেন। তিনি জাতীয় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে।
তিনি ১৯৭৭ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে রুপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-১৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে সিলেট ৪-আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের প্রাথী হিসেবে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সবচেয়ে বেশি এবং সর্বোচ্চ ১২ বার জাতীয় বাজেট পেশ করেন।
সিলেটের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজারে বিশাল বিশাল নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে তার গ্রামের বাড়ি বাহারমর্দ্দন পারিবারিক কবরস্থানে তার প্রিয় জীবন সঙ্গীনী বেগম দুররে সামাদ রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এত বছর পর তাঁর কবরের মাটি পুরাতন হয়ে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন সিলেটবাসীর অন্তরে আর অনুভবে।