হবিগঞ্জে আশ্রয়ণের ঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪১:৫৬,অপরাহ্ন ২৫ আগস্ট ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
পাশেই কালনী নদীর বহমান জল। মনোরম পরিবেশেই নির্মিত হয়েছে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। কিন্তু পর্যাপ্ত মাটি ভরাট না করেই নিচু ভূমিতে তৈরি করা হয়েছে ৫১টি ঘর। সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। প্রকল্পের ঘরে জমে হাঁটু সমান পানি। নানা ভোগান্তির শিকার হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। উপকারভোগীদের কেউ কেউ বরাদ্দ পাওয়া ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও দুর্ভোগের শেষ নেই। সেখানে বসবাসে নানা অসুবিধা হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে কাঁদা-পানিতে একাকার হয় প্রকল্প এলাকা। ঘরের ভেতর ও টয়লেটে পানি জমায় বাসিন্দাদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকই ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে।
জানা গেছে, ৫১টি পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠলেও এরই মধ্যে ঘর ছেড়ে চলে গেছে ২০টি পরিবার। অনেকেই প্রকল্পের ঘরের পরিবর্তে অন্যত্র বসবাসের কথা ভাবছেন।
জানা যায়, ২০২০ সালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেওয়ে আশ্রায়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৫১টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় ভূমিহীন পরিবারগুলোকে। সবুজ টিন আর সাদা রঙের পাকা বিল্ডিংয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস শুরু করেন উপকারভোগীরা। কিন্তু বর্ষা মৌসুম এলেই সেখানে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। ফলে অল্প দিনেই স্বপ্নভঙ্গ হয় প্রকল্পের বাসিন্দাদের।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্পের কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানিতে টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা অনিলা শীল বলেন, আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সরকারের দেওয়া উপহারের ঘরে উঠেছিলাম। কিন্তু আশ্রয়ণের ঘরে এসেও আমাদের ভাগ্য ঘোরেনি। বৃষ্টি এলেই পানি জমে থাকে ঘরের চারপাশে। আবার রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। আশ্রয়ণের পাঁচটি টিউবওয়েলের মধ্যে তিনটিই নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে আমাদের বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে।
আব্দুস সামাদ আনসারী জানান, সরকার আমাদের উপহারের ঘর দিয়েছে ঠিকই; কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পে রাস্তা বা কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। রাস্তা না থাকায় আশ্রয়ণের ঘরে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অপর বাসিন্দা হেনা আক্তার (৫০) বলেন, ‘ঘরে ওঠার পর থেকে নানা সমস্যায় ভুগছি। বৃষ্টি এলেই ঘরে পানি জমে থাকে। সংসার করতে সমস্যা হয়। অনেকেই এসব ভোগান্তি মানতে না পেরে ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।’
বাসিন্দা তোহাব মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আমিনুল হক নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, কয়েকটি ঘরে ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকতে হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ঘরের সামনে সবসময় কাদা থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল ভৌমিক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিরসনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। শিগগিরই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সব সমস্যা সমাধান করে বাসিন্দাদের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
উপকারভোগীদের আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ইউএনও জানান, প্রাথমিকভাবে তালিকা করে জানা গেছে, প্রকল্পের বাসিন্দা লেকু সরকার, কাইয়ুম মিয়া, রজব মিয়া, তহিমুল মিয়া, মারুফ মিয়া, আলী হায়দার, মহব্বত মিয়া, দুলাল মিয়া, ভুষণ সূত্রধর, মকুল সূত্রধর, জয় কুমার শুক্ল, সমীরণ সরকার, নজরুল মিয়ার বরাদ্দকৃত ঘরে তালা ঝুলছে। শিগগির নতুনভাবে বরাদ্দসহ সব সমস্যার সমাধান করা হবে। সূত্র-সমকাল