সাগরপথে ইতালিযাত্রা: নৌকা ডুবে ৯ বাংলাদেশি নিখোঁজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩১:২২,অপরাহ্ন ১২ আগস্ট ২০২৩
দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় বাংলাদেশি নয় যুবক নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা সবাই নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বাসিন্দা। এ ঘটনায় নিখোঁজ যুবকদের স্বজনরা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
নিখোঁজ নয় যুবক হলেন, বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আব্দুল মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।
তারা প্রত্যেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের (জাকিরের ফুফু) মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
নিখোঁজ কামাল মিয়ার ছোট ভাই জামাল মিয়া বলেন, ‘৫-৬ মাস আগে আমার ভাইকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালির উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যান কালাম। দীর্ঘদিন গেমঘরে রেখে সবশেষ গত বুধবার রাত ৮টায় নৌকায় তুলে ইতালির পথে যাত্রা করে। ৪০ মিনিট পর নৌকা ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে ২০ জন থেকে ১২ জন ফিরে এলেও আটজন নিখোঁজ রয়ে যায়। এ তথ্য দালাল জাকির হোসেন স্থানীয় মিলন মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের জানান। এর মধ্যে আমার ভাই কালাম নিখোঁজ রয়েছে।’
নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, ‘আমার ভাই আট মাস আগে লিবিয়া গিয়েছিল ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে। সেখানে ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়নি। দুলালকান্দির দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে নয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আমার ভাই নিখোঁজ।’
এ বিষয়ে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মিয়া জানান, খবর পেয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন দিলে মোবাইল অন্য একজন রিসিভ করে তাকে জানান, জাকির হোসেনের আন্ডারে ২০ জনের থেকে ১২ জন উদ্ধার হলেও আটজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে দালাল জাকির হোসেন ও শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা জান্নাত তাহেরা শনিবার সকালে বলেন, ‘লিবিয়াতে আমাদের কোনো দূতাবাস নেই। তাই এ বিষয়ে তদারিক করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে জনসচেতনতা কর্মসূচি করে গ্রামের লোকদের সচেতন করা হয়েছে। তবু অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিয়ে এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়। আমরা বিদেশে যাওয়ার আগে জানতে পারি না, তবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে খবর পাই। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’
নরসিংদী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, ‘অবৈধ পথে প্রবাসে পাড়ি দেয়া শ্রমিক বা নিখোঁজদের তথ্য আমাদের অফিসে আসে না। বেলাবর বিষয়টা এখনো অবগত নই। বড় ধরনের কোনো ইস্যু থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আমরা যৌথভাবে কাজ করে থাকি।’
ছবি ও খবর: দৈনিক বাংলা