সিলেটে ভুল হওয়া কোরআনের কপি জ্বালিয়ে নতুনগুলো বিতরণ করতে চেয়েছিলেন তারা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ৭:০৮ অপরাহ্ণ
সিলেটে কেন এই ঘটনা। রহস্যই বা কি? হঠাৎ কেন উত্তেজিত মানুষ। এ নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা নিয়মিত নামাজ পড়েন। এমনকি বিনামূল্যে কোরআন শরীফ বিতরণও করে থাকেন। এ নিয়ে নানা আলোচনাও সিলেটে। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়েছে। কৌশলে উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে জড়িত দু’ব্যক্তিকে থানায় পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। নগরের আখালিয়ার ধানুহাটা এলাকা। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এটি এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক নুরুর রহমান পরিচিত মানুষ। তার সঙ্গে ছিলেন মাহবুবুল আলম নামের আরেক শিক্ষক। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় স্কুলের প্রধান ফটকের কাছে বস্তা থেকে কিছু বের করে আগুন ধরান। ফটকের কাছে ঘটনাটি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন কোরআন শরীফে আগুন দিচ্ছে মনে করে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় উপস্থিত জনতা নুরুর রহমান ও মাহবুবকে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে যান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। সঙ্গে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে। তারা ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে নুরুর রহমান ও মাহবুবুলকে উদ্ধার করে স্কুলের একটি কক্ষে নিয়ে যান। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লাইভ সম্প্রাচার করতে থাকেন। এতে ক্ষোভ আরও বাড়ে এলাকায়।
আধাঘণ্টার মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে যান হাজারো জনতা। তারা ঘটনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আটককৃতরা জানায়- তাদের সহকর্মী ইসহাক তাদেরকে কাগজের কার্টুন ও বস্তার ভেতরে কোরআন শরীফ দিয়ে যান এবং জানান কয়েকটি কপি ছাপাতে ভুল রয়েছে। এগুলো যেনো পুড়িয়ে ফেলা হয়। বাকিগুলো বিতরণের জন্য রাখা হয়। ইসহাকের এই কথার প্রেক্ষিতে তারা ছাপাতে ভুল থাকা কয়েকটি কোরআন শরীফ আলাদা করে ফটকের বাইরে এনে আগুন দিয়েছেন। আর এ দৃশ্য দেখে জনতা ক্ষুব্ধ হয়েছে। এদিকে, ঘটনার সময় হাজারো জনতা উপস্থিত থাকায় প্রায় দুইঘণ্টা আটক দুই ব্যক্তিকে নিয়ে পুলিশ স্কুলের ভেতরে অবরুদ্ধ ছিল। এ সময় ডাকা হয় পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআরটিকে। র্যাবের কয়েকটি টিমও অবস্থান নেয় এলাকায়। রাত সাড়ে ১২টার পর উত্তেজিত জনতাকে প্রশমিত করতে স্কুলের ফটকের সামনে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
এতে জনতা ওই এলাকা থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা অবস্থান নেয় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ওখানে লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর রাত ১টার দিকে আটক দু’ব্যক্তিকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় চলে যায় পুলিশ। তবে, পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় রাতভর ওই এলাকায় পুলিশের কয়েকটি টিম টহলে ছিল। ঘটনার সময় নুরুর রহমান ও মাহবুবুল আলমকে চেনে এ রকম কয়েকজন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্ত না হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী ফায়দা লুটতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তারা। স্থানীয় এলাকাবাসী ও নগরের মানুষকে স্বাভাবিক থাকার অনুরোধ জানান তারা। এ ঘটনায় গতকাল পুলিশের তরফ থেকে আটক দু’ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ছাপাতে ভুল থাকা কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনা স্বীকার করে। এ কারণে পুলিশ ঘটনায় আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ইলিয়াস শরীফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাকারীদের বিরুদ্ধে ও যারা এ ঘটনায় গুজব রটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করতে পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানান। জবাবে পুলিশ কমিশনার ইলিয়াস শরীফ জানিয়েছেন, ঘটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঘটনার পরপরই যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ওই কোরআন শরীফ দিয়েছিল তাকেও পুলিশের হেফাজাতে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের তরফ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি স্থানীয় লোকজনকে শান্ত থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। কারও প্ররোচনায় উত্তেজিত না হওয়ারও অনুরোধ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, একটি কাগজের কার্টুনে একটি বস্তার ভেতরে করে কোরআন শরীফগুলো দেয়া হয়েছিল মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের কাছে। ইসহাক নামের ওই ব্যক্তি সিলেট শহরতলীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এ কারণে তাকেও হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মো. মাহমুদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে কোরআন পুড়ানোর সত্যতা মিলেছে। তবে তা ছাপায় ভুল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।