বালাগঞ্জে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ তামান্না কলেজের অধ্যক্ষ: আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১০:০২ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত নর্থইস্ট বালাগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তামান্না বেগমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কিভাবে অধ্যক্ষ হলেন শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ?
নামপ্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগকারীরা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলেজ কর্তৃপক্ষ- আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ডের নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত ফি সাড়ে ছয় হাজার টাকা জোরপূর্বক আদায়, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তামান্না বেগমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন! কোচিং এর নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, নির্দিষ্ট পরীক্ষার ছাড়াও অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ে ফি আদায় বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে অধ্যক্ষ তামান্না বেগমের বিরুদ্ধে। আরো জানা যায়, কলেজ কমিটির দাতা সদস্য আব্দুল কাদির কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল মতিন দেশে অবস্থান কালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন আচরণ, বিভিন্ন সময় ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালীন মেয়েদের মাস্ক ও হিজাব খুলতে বাধ্য করা সহ ছাত্রীদের প্রায়ই বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে উত্ত্যক্ত করেন। যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়াতে পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। কলেজ কমিটির অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সোচ্ছার হলে বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করা সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে গত ১৬ জুলাই বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্তে নর্থইস্ট বালাগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থীরা যা প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, অনিয়ম, দুর্নীতির দরখাস্ত করার পর শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করলে কলেজের অধ্যক্ষ তামান্না বেগম ও কলেজ ম্যানেজিং কমিটি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে বসে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা করেন।
এদিকে নর্থইস্ট বালাগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তামান্না উচ্চ মাধ্যমিকের গুণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কিভাবে অধ্যক্ষ হওয়া সম্ভব তা নর্থইস্ট কলেজের দিকে তাকালে বুঝা যায়!
নর্থইস্ট বালাগঞ্জ কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমির হোসেন নুরু বলেন, কে কে অভিযোগ করেছে নাম বলুন! তারা কে অনিয়ম, দুর্নীতি দেখার। আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলবে শিক্ষা বোর্ড। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয়ে বলেন, আপনাদের কাছে অভিযোগ গেছে যখন এম.এ পাশ একজন দিয়েন। এম.এ বা বি.এ পাশ ফেলে বদলিয়ে নেবো। এই কলেজ আমাদের ব্যক্তিগত কলেজ, যেরকম পাচ্ছি, সেরকম চালাচ্ছি। নেটে লিখেও পাচ্ছি না বি.এ পাশ।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশের বিষয়টি স্বীকার করে বালাগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ তামান্না বেগম বলেন, ফরম ফিলাপের জন্য তিন হাজার চারশত করে নিয়েছি। বেসরকারি কলেজ বিবিধ বিষয়ে অতিরিক্ত টাকা নিতে হয়। কলেজ কমিটি ও অভিযোগকারীদের অভিভাবক নিয়ে বসে সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
যোগ্যতার ব্যাপারে বলেন, কলেজের কার্যক্রম বন্ধ। দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না দেখে কলেজ ম্যানেজিং কমিটি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি মাত্র একটা স্বাক্ষরের মালিক। অনেক কাজ আটকে আছে তাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমির কান্তি দেব বলেন, আগামী সপ্তাহে তদন্ত করা হবে। তদন্তের পর সবকিছু খোলাসা হবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে, সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি করেছি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ও সমঝোতার বিষয়ে বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেড়িয়ে আসবে।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব প্রফেসর মো. কবির আহমদ বলেন, এটা আমাদের অধীনস্থ কলেজ কি না জানিনা। অধীনস্থ হলে ফরম ফিলাপের টাকা কেনো বেশী নিবে ? অভিযোগকারীরা আমাদের কন্ট্রোলার কে বললে, ওদের (কলেজ কর্তৃপক্ষ) জিজ্ঞেস করতে পারবে। দ্বিতীয়ত লোকাল অথোরিটি ইউএনও, মাধ্যমিক কর্মকর্তা কে জানানো। তারা আমাদের কাছে তদন্ত রিপোর্ট দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে সিলেট’র কলেজ পরিদর্শক কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নম্বর : সিশিবো/ কঃ শাঃ/ ২০১৯/ ৩০৪) ০৫ সদস্য বিশিষ্ট গভর্ণিংবডির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।