মৌলভীবাজারে কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২২, ৬:০৩ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মনু নদের ওপর প্রায় ৩২ কোটি টাকার রাজাপুরের সেতু নির্মিত হয়েছে। বিগত ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও এক বছর আগে কাজ শেষ হলেও সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি জনগনের কাজে আসছেনা। সেতুর সংযোগ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেতুটির দুই পাশে বাঁশের মই দিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় লোকজনের সুবিধার কথা ভেবে কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে এলাকাবাসীর কাছে এই সেতু এখন ভোগান্তির কারণ। ফলে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই ব্যবহার করে বর্তমানে পারাপার হচ্ছেন। জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি বলে জানায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
স্থানীয় মানুষজন জানান, স্বপ্নের এই সেতুটি রাস্তা থেকে বেশ উঁচু। এটির পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট এবং পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু। ফলে বাঁশের মই দিয়ে এখন ওঠানামার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পূর্ব পাশে একটি ও পশ্চিম পাশে আরেকটি খেয়াঘাট ছিল। পশ্চিম পারে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম রয়েছে। এসব এলাকার লোকজন খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদটি পার হয়ে উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সেতুটির দুই পাশে কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-শরীফপুর সড়ক। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুর দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জামিল-ইকবাল নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পেয়েছিল। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় এবং চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ এখনো পড়ে আছে।
ভুক্তভোগী লোকজন জানান, হাজীপুর ও শরীফপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের প্রতিদিন এই সেতু পার হয়ে পৃথিমপাশা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
হাজারো মানুষের স্বপ্নের সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ না হওয়ায় উন্নয়নের দ্বার খুলছে না। দ্রæত এই সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করার জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
সওজের কুলাউড়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার জানান, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে জটিলতায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভুমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ভুমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।