এবার ডুবল সুনামগঞ্জের হুরামন্দিরা হাওড়, থামছে না কৃষকের কান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২২, ২:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে এবার ডুবল হুরামন্দিরা হাওড়ের ১২০০ হেক্টর বোরো ফসল। পার্শ্ববর্তী চাপতির হাওড় তলিয়ে যাওয়ার ১২ দিনের মাথায় উপজেলার জগদল ইউনিয়নের সাতবিলা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল হুরামন্দিরা হাওড়ের আধাপাকা ধান।
চোখের সামনে সোনার ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হাওড়পারের কৃষকের কান্না থামছে না। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে সাতভিলা বাঁধ ভেঙে ও কামারখালী নদীর তীর উপচে রোববার রাতে পানি ঢুকে হাওড় তলিয়ে যায়।
সন্ধ্যায় বাঁধ ভাঙার খবর শুনে স্থানীয় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাঁধ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, হুরামন্দিরা হাওড়ের ১২০০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানান, হুরামন্দিরা হাওড়ে এখনো হাইব্রিড জাতীয় ধান পাকেনি। এরপরও আধাপাকা প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। অনেকেই কাঁচিও চালাতে পারেননি, রাতে বাঁধ ভেঙে নিমিষেই তলিয়ে গেছে তাদের ফসল। ফসল হারিয়ে ১২টি গ্রামের অন্তত তিন হাজার কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, আফার বেঁড়ি বাঁধে নিচু করে মাটি ফেলা হয়েছে। ফলে সহজেই পানি উপচে হাওরে ঢুকে পড়ে। পানির অতিরিক্ত চাপে সাতভিলা বাঁধটিও ভেঙে যায়।
কৃষকরা জানান, পাউবো তৃতীয় কিস্তিতে ৫ শতাংশ টাকা ছাড় দেয় পিআইসিকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি)। টাকার অভাবে বেঁড়ি বাঁধে মাটি উঁচু করে ফেলতে পারেনি পিআইসির লোকজন।
কৃষকরা জানান, তাদের অনেকেই হারভেস্টার মেশিন দিয়ে যখন ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন, ঠিক তখনই সর্বনাশা ঢলের পানি সব নিয়ে গেল।
আব্দুল কাইয়ুম নামে এক কৃষক জানান, ১০ কেয়ার জমির মধ্যে চার কেয়ার জমি কাটা হয়েছে। তাও নৌকার জন্য আনতে পারছেন না।
বিলাপ করে তিনি বলেন, নৌকা জন্য আমার কাটা ধান ঘরে আনতে পারছি না।
বাসুরী গ্রামের কৃষক সমরুল ইসলাম জানান, হুরামন্দিরা হাওড়ে ৬০ কেয়ার জমি চাষ করেছেন। ১০ কেয়ার জমি কেটেছেন।
পিআইসির দুর্বল কাজের জন্য বাঁধটি ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নারাইনকুড়ি গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া জানান, ১৫ কেয়ার জমি করছিলাম, ৫ কেয়ার জমি মাত্র কাটছি, বাকি ধান কাটতে পারেননি। নিজেদের খাবারের পাশাপাশি গবাদিপশুর জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
মিলন মিয়া বলেন, বাঁধের কাজে শুধু পিআইসিকে দোষ দিলে চলবে না। যতদূর জানি- পিআইসিকে বিল দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ, তারা কীভাবে শতভাগ কাজ করবে।
কৃষক আব্দুল হামিদের পরিবার ২৬ কেয়ার জমি চাষ করেছিলেন, তাদের ২২ কেয়ার জমি তলিয়ে গেছে। যে চার কেয়ার কাটা হয়েছে তা আনতে মাদ্রাসাপড়ুয়া মেয়ে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, এতদিন ধান পাকেনি, তাই কাটতে পারিনি, এখন ধান পাকছে, কিন্তু পানিতে তলিয়ে গেল।
দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হুরামন্দির হাওগের প্রায় ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এখনও হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা অব্যাহত আছে।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলু বলেন, ৪২নং পিআইসি সাতভিলা বাঁধের আওতায় হুরামন্দির হাওড়ে ১২০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ পাকা আধাপাকা ধান কাটা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমার চোখের সামনে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওড়ে, তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের একমাত্র সোনার ফসল।