হাওরে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল: কৃষকের কান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২০:০০,অপরাহ্ন ১৮ এপ্রিল ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার কৃষকদের। অব্যাহত বাঁধ ভাঙা ঠেকাতে দিনরাত এক করছেন তারা। কিন্তু তাতে কোনো লাভই হচ্ছে না। উল্টো নতুন করে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। বিস্তারিত আমাদের তাহিরপুর ও ছাতক প্রতিনিধির পাঠানো রিপোর্টে- তাহিরপুর: ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের পানির স্রোতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের কান্দা উপচে এবং বাঁধ ভেঙে হাওরে হু হু করে পানি ঢুকছে।
গতকাল সকাল ৭টার দিকে টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বর্ধিত গুরমার হাওর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এ সময় ২৭নং পিআইসি বাঁধটি দেবে যেতে দেখা গেছে। হাওর পাড়ের গোলাবাড়ী গ্রামের খসসুল আলম বলেন, গতকাল সকাল ৭টা থেকে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
এভাবে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকলে বর্ধিত গুরমা হাওর অংশের খাউজ্যাউরি, নোয়াল, আইন্যা, কলমা ও গলগলিয়া ও ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা এলাকার হাওরগুলোর ফসলি জমিও ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিবে। গত ১০ দিন ধরে উপজেলা প্রশাসন, কৃষক ও এলাকাবাসী আপ্রাণ চেষ্টা করেও হাওরটি আর মনে হয় রক্ষা করা যাবে না। এসব হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর বোরো জমিতে আধাপাকা ধান রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এটা নতুন কোনো বাঁধ নয়, এ হাওরের পুরনো স্থায়ী বাঁধ। শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়ে হাওরে ব্যাপক পানির চাপ সৃষ্টি হলে সকালে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢোকে। তারা আরও বলেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরমা বাঁধের এ অংশটুকুটর প্রায় তিনশ’ গজ বাঁধে কোনো কাজ করেননি। যার ফলে বাঁধের উপর দিয়ে উপচে এ বছর পানি হাওরে প্রবেশ করছে।
গতকাল সকালে সংবাদ পেয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বর্ধিত গুরমার হাওর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা গতাল দুপুর ১২টায় ছিল পাঁচ দশমিক ৮৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটায় এ সময়ে পানি বেড়েছে ৭১ সেন্টিমিটার, পাটলাই নদে ৪৩ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩ মিলিমিটার।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবীর বলেন, পাটলাই নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় অবস্থা এখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বাঁধে মাটি ও বাঁশের চাটাই দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ছাতক: ছাতকে নদ-নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ। হাওরের ফসল নিয়ে এখন শঙ্কিত এখানের কৃষকরা। গত রাত থেকে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে মেরামত কাজ করে যাচ্ছেন কৃষক ও স্থানীয়রা। গত শনিবার ঝিগলী-খঞ্জনপুর গ্রামের পূর্বে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের ফাটার হাওরে। স্থানীয় কৃষকরা হাওর রক্ষা বাঁধ মেরামতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ হাওরে এলাকার ঝিগলী-খঞ্জনপুর, জিয়াপুরসহ অনেক গ্রামের ব্যুরো ফসল রয়েছে। এ অঞ্চলের মধ্যে ফাটার হাওরই হচ্ছে বড় হাওর। ইউনিয়নের চাউলির হাওর রক্ষা বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। এদিকে পানি ঢুকে ব্যুরো ফসল তলিয়ে যাচ্ছে দোলারবাজার ইউনিয়নের খলাবন্দ হাওরের। এ হাওরে রয়েছে যুগল নগর, গোবিন্দপুর, জাহিদপুর, পূর্ব বসন্তপুর, বসন্তপুর, বুরাইয়া গ্রামের কৃষকদের ফসল। এখানে বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় হাওরের ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আখলুছ আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খয়ের জানান, স্থানীয় একটি মহলের বিরোধিতার কারণে এস এফ ডব্লিউ, আর ডি পি-২ এর অধীনে জহির ভাংগা-বসন্তপুর উপ-প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এ হাওরের ফসল আজ তলিয়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ঝুঁকিপূর্ণ হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকারের সৃষ্টি হয়েছিল। দিনরাত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে কাজ করেছেন কৃষকরা। বাঁধে-বাঁধে কৃষকদের রাত কাটাতে হয়েছে। বন্যার পানি কিছুটা হ্রাস পেলে কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে। এর মধ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে অর্ধপাকা অনেক ধান কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। এক সপ্তাহের মধ্যে আবারো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। একটি হাওরের বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। আরও কয়েকটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান জানান, প্রথম দফা বন্যায় নিচু এলাকার ব্যুরো ফসল নষ্ট হয়েছে। একটি হাওরের বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তবে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ মেরামতে কাজ করছেন কৃষকরা। এতে সরকারি সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে। বাঁধ তদারকিসহ কৃষকদের ব্যুরো ফসল ঘরে তুলতে উপজেলা কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।