সুনামগঞ্জে শত চেষ্টার পর ভেঙে গেল ফসল রক্ষা বাঁধ, কৃষকের বোবাকান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০৫:৫৬,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০২২
গত ১৪ দিন ধরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন বর্ধিত গুরমা ফসল রক্ষা বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে সব চেষ্টাই করেছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। বাঁধটি রক্ষায় পালাক্রমে তদারকিতে ছিলেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ভেঙে গেল বর্ধিত গুরমা ফসল রক্ষা বাঁধের বাঘমারা ও নোয়াল কান্দার ১৫০ ফুট অংশ।
আজ রবিবার বিকাল ৪টায় পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে ভেঙে যায় বাঁধ দুইটি। ভেঙে যাওয়া দু’টি অংশ দিয়ে প্রবল বেগে হাওরে পানি ঢুকছে।
বাঘমারা ও নোয়াল বাঁধ দুইটি টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন বর্ধিত গুরমার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যথাক্রমে ২৩ ও ২৭ নম্বর প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। বর্ধিত গুরমা ফসল রক্ষা বাঁধ নামে ২৮টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাঁধের যেকোনো অংশ ভেঙে গেলেই ফসল রক্ষা বাঁধের সবগুলো প্রকল্পই অকার্যকর হয়ে পড়ে।
হাওরপাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাত থেকেই পাহাড়ি ঢলে পাটলা নদ ও টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি বেড়েছে। এতে করে বর্ধিত গুরমা ফসলরক্ষা বাঁধে পানির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া দুই সপ্তাহ ধরে পানির চাপের কারণে মাটির বাঁধগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বাঁধ দুইটি ভেঙে যাওয়ায় গলগলিয়া, নোয়াল, কাউয়ার বিল, কাউজ্জাউরি, গাঁওর কিত্তা (ভবানীপুর), কলমা ও শালদিঘা হাওরের আবাদ করা বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান তলিয়ে যাবে। এসব হাওরে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ও মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের ৮ হাজার ৩শ একর জমির ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে তাহিরপুর অংশে ৬ হাজার একর আর মধ্যনগর অংশে ২ হাজার ৩০০ একর।
কৃষকরা জানিয়েছেন, তাহিরপুর অংশে ৪ হাজার ৫০০ একর আর মধ্যনগর অংশে ৬০০ একর জমির আধাপাকা ধান কাটা হয়েছে। এসব হাওরে তাহিরপুর উপজেলার ভবানীপুর, মানিকখিলা, দুমাল, লামাগাঁও, হুকুমপুর, রামসিংহপুর, সন্তোষপুর গ্রামের কৃষকরা এবং মধ্যনগর অংশে কাউয়ানি, মাকড়দি, বিশরপাশা, নিশ্চিন্তপুরসহ ১০টি গ্রামের কৃষকরা ধানের আবাদ করেছেন। তবে বাকি জমির ধান রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী গাঙ্গের মুখের বাঁধ মজবুত করতে দুপুর থেকে কাজ শুরু করেছেন।
মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা সবাই মিলেই বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টাই করেছি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, ১৪ দিন ধরে হাওরপাড়ের কৃষক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বর্ধিত গুরমা ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টাই করেছেন। কিন্তু অত্যধিক পানির চাপে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ভেঙে গেছে বাঁধ।
তাহিরপুরের ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, বর্ধিত গুরমা বাঁধ রক্ষায় প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই সবাই মিলে রাত দিন কাজ করেছি। কিন্তু আজ বিকাল ৪টায় বাঁধের দুইটি স্থান ভেঙে যায়। এখন কিছু জমি বাঁচাতে লামাগাঁও বাজার ও দুমাল গ্রামের মধ্যের বাঁধটি আরো মজবুত করতে কাজ করছি।