হাওরে থেমে নেই বাঁধ ধস: উৎকণ্ঠিত জগন্নাথপুরের কৃষক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
জগন্নাথপুর সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের কয়েকটি ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ বার বার ধসে পড়ছে। স্থানীয় কৃষকরা কষ্টার্জিত হাওরের ফসল বাঁচাতে এসব দুর্বল বাঁধ রক্ষায় লড়ছেন।
গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নলুয়া হাওরের কমপক্ষে সাতটি বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে নলুয়া হাওরের চার নম্বর প্রকল্পের হামহামি বাঁধে ফাইল দেখা দিলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ রক্ষায় কাজ চালানো হয়। এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় ওই হাওরের ৫ নম্বর প্রকল্পের ভুরাখালি নামকস্থানে ফের ধসে পড়লে হাওরের তিনশধাধিক কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চালান। অভিযোগ রয়েছে, নিন্মমানে ও দায়সারাভাবে বাঁধের কাজ হওয়ায় সামান্য বৃুষ্টি ও পানির চাপে বারবার বাঁধটি ধসে পড়ছে।
২০১৭ সালে এ বাঁধ ভেঙে নলুয়া হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছিল। এদিকে নলুয়ার ৬ ও ৭ নম্বর প্রকল্পের ধসে দেখা দিলেও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সংস্কার করা হয়।
নলুয়া হাওরপারের কৃষক নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, এবার বেড়িবাঁধের কাজ খুবই নিম্মমানের হওয়াতে এসব দুর্বল বাঁধ বৃষ্টিতে ও সামান্য পানির চাপে ভেঙে যাচ্ছে। ৫ নম্বর প্রকল্পে বারবার ধসে পড়ছে। আমরা স্থানীয় কৃষকদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি রক্ষায় কাজ করছি।
৫ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, পাউবোর নির্দেশনা অনুয়ায়ি বাঁধের কাজ করেছি। এ প্রকল্পে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তিনি সাত লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
হাওরপারের কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলা কার্যালয় সুত্র জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দে ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ১৫ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ করা হয়। গত কয়েকদিনে উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জগন্নাথপুরের কমপক্ষে ১৫টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়ে। এসব বাঁধের মধ্যে সাতটি বাঁধে ফাইল দেখা দেয়। একের পর এক বাঁধ ধসে পড়ার ঘটনায় ফসলহানির শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসি ( প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করায় প্রায় এক মাস পর। ফলে হাওরে বিলম্বে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ সমাপ্ত হয়নি। দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় এবং তাড়াগুড়া করে কাজ করায় অনেক বাঁধে ত্রুটি ও দুর্বল কাজ হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দায়সারাভাব, দায়িত্বহীনতা এবং প্রকল্পের কমিটির সঙ্গে আর্থিক যোগসাজনে বাঁধের কাজ নিন্মমানের হওয়াতে সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত হাওরের ফসলরক্ষা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলেও আমরা আন্দোলনে নামব।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার জানান, নীতিমালা অনুয়ায়ী বাঁধের কাজ হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসলরক্ষায় আমরা মাঠে কাজ করছি।