সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে একাই দাঁড়ালেন মা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৪:০০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
আদালতের প্রবেশপথে মানববন্ধনের ব্যানার টানিয়ে সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন এক মা। বুধবার দুপুরে ছেলে রাব্বি হত্যার বিচার চেয়ে সুনামগঞ্জে জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে একাই মানববন্ধন করেন তিনি।
মানববন্ধনে দাঁড়ানো মায়ের নাম রুপিয়া বেগম। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের পূর্ব নোয়ারাই গ্রামে। একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (২২) হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে একাই মানববন্ধন করেন তিনি।
রুপিয়া বেগম বলেন, ‘২০১৯ সালে ২৩ জুলাই বিকেলে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার বাজারের একটি দোকানে বসে চা খাইতেছিল আমার রাব্বি। ঐ সময় লিয়াকত, তারেক আর সোহাগ আইয়া হঠাৎ করি আমার ছেলেকে পেছন থেকে কোপ দেয়। আমার ছেলেটা ডরাইয়া (ভয় পেয়ে) দৌড় দিসে। কিন্তু আমার পোয়াটারে (ছেলেটাকে) তারা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া কোপাইয়া মারসে রাম দা দিয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলে যখন আহত অবস্থায় পড়িয়া রইছে, কেউ হাত দিসে না, হসপিটাল লইয়া গেছে না, আমি পুলিশরে কইছি তারা খালি আমারে দৌড়াইছে। পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে মারা যায় আমার যাদু বাছাইটা।’
ঘটনার পর ২৬ জুলাই রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতর করে পুলিশ। বর্তমানে আসামিদের মধ্যে শুধু লিয়াকত আলী জেলে আছেন। এছাড়া একজন আসামি পলাতক। আর বাকি আসামিরা আদালত থেকে জামিনে আছে। পুলিশ মামলার তদন্ত করে ১৭ আসামির মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া আসামিদের নাম আবার যুক্ত করতে রুপিয়া বেগমের আইনজীবী আদালতে আবেদন করেছেন।
জামিনে মুক্ত আসামিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে এবং মারধর করেছে জানিয়ে রুপিয়া বেগম বলেন, ‘আমি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন আনছিল ওই সময় তারা ঢাকা যাত্রাবাড়ি আমারে মারছে, আমার পা এখনো ফুলা (ফুলে) রইছে। আমার একটা ছোট মেয়ে আছে, মেয়েটারেও তারা মারি লাইতো (মেরে ফেলার) হুমকি দিসে, আমি আমার আর আমার ছোট মেয়েটার জানের নিরাপত্তা চাই। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হউক। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’
রুপিয়া বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অনেক কষ্ট করে তার ছেলে রাব্বিকে বড় করেছেন। দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে রাব্বি সংসার চালাতো। ছেলেকে হারিয়ে তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
মামলার আইনজীবী মল্লিক মো. মইন উদ্দিন বলেন, মামলার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া আসামিদের আবার যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এ আবেদন শুনানির পর্যায়ে আছে।