খোঁজ রাখে না কেউ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২:৫১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গভীর রাত। সুনসান নীরবতা। অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছেন সবাই। কিন্তু তখনো অন্যের জানমালের নিরাপত্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন একদল লোক। তারা নৈশপ্রহরী। সিকিউরিটি গার্ড। তাদেরই একজন রশিদ মিয়া (৪৫)।
বউ, ছেলে-মেয়ে রংপুরে রেখে পেটের দায়ে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়েছিলেন ১০ বছর আগে। এখন রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। থাকা খাওয়া দিয়ে মাসে মাইনে জোটে ১২ হাজার টাকা। রশিদ মিয়া জানান, ১২ ঘণ্টা ডিউটি করি। যেখানে কাজ করি, সেই প্রতিষ্ঠানেই থাকি। একটা মেসে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে মাসে দিতে হয় ২ হাজার টাকা। মেয়েটা বড়। বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ছেলে দুটো ছোট। লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আমার খরচ-খরচার কিছু টাকা রেখে মাসের প্রথমে ওদের মার কাছে সবটাই পাঠিয়ে দিই।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিম বুথের গার্ড শুকুর আলী। দিনে বুথের সামনে ডিউটি। রাতে মাদুর বিছিয়ে এটিএম বুথের ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়েন। শুকুর আলী বলেন, ঘণ্টা বুঝি না। ২৪ ঘণ্টাই আমাদের ডিউটি। সারাদিন কত মানুষ টাকা তুলতে বুথে আসেন। কিন্তু মনের কথা বলার মতো একটা লোকও পাই না। বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি জসিম (২২)। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে চাকরি নেন থার্ডপার্টি একটি সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানিতে। এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। জসিম বলেন, ভেবেছিলাম জীবনে বড় কিছু করবো। কিন্তু সংসারের টানাপড়েনে তা আর হয়ে ওঠেনি। বারো ঘণ্টা ডিউটি করি। অনেক সময় ১৪-১৫ ঘণ্টা পড়ে যায়। এর পরও মাঝেমধ্যে খুব বঞ্চনার শিকার হতে হয়। সব শেষে মাসোয়ারা যা পায় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। গত ৮ বছর ধরে গুলশানের একটি এলাকায় নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াকুব আলী। বলেন, সারাদিন কাজ শেষে মানুষ যখন শান্তিতে ঘুমাতে যায়, তখন আমরা কাজে আসি। আমাদের ওপর ভরসা করেই সকলে তাদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাতের বেলা আলাদা এক দুনিয়া। দিনের আলোয় যেই রাস্তায় মানুষের ভিড়ে চলা দায়, সেই রাস্তায় রাতের বেলা সুনসান নীরবতা। প্রতিরাতে নানা কিসিমের মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। কখনো তারা ভয় পায়, কখনো আমাদেরও ভয় লাগে।
বনশ্রীর নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন মো. ওমর ফারুখ। তার মতে, ২৪ ঘণ্টাই তার ডিউটি। ওখানেই থাকেন, ওখানেই রান্না করে খান তিনি। ওমর ফারুখ বলেন, বউ-বাচ্চা দেশের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ রেখে এলাকার এক বড়ভাইয়ের মাধ্যমে ৫ বছর আগে দারোয়ানের চাকরি নিয়ে ঢাকায় আসি। এর আগেও ২-৩ জায়গায় কাজ করেছি। গত ডিসেম্বরে এখানে এসেছি। সারা দিন সাইটের (নির্মাণাধীন বিল্ডিং) কাজ দেখি। রাতে কেউ না থাকলে একাই পাহারা দিই। ইট, বালি, সিমেন্ট, রড এলে সেদিকেও নজর রাখতে হয়। মাস শেষে যা পায় তা দিয়ে নিজে চলি আর বাকিটা বাড়ি পাঠায়। আমাদের খোঁজ নেবে কে?