ব্যথিত আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
অবশেষে সিলেট বিএনপি’র সমাবেশে দাওয়াত পেলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল দুপুরে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার তাকে দাওয়াত দেন। তবে- এতে ‘ব্যথিত’ আরিফ। এত পরে কেন দাওয়াত- এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এরপরও সমাবেশের আগের দিন দাওয়াত দেয়ায় তিনি অভিমান ভেঙেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশে আজ বুধবার সিলেটের টুকেরবাজারে সমাবেশ করছে বিএনপি। এই সমাবেশের আয়োজক সিলেট জেলা বিএনপি। দ্রুত জেলা সম্মেলন শেষ করতে এখন সিলেট জেলা বিএনপি’র নেতারা ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
জেলার সম্মেলন শেষ করতে তাদের টাইমফ্রেম দেয়া হয়েছে জানুয়ারি পর্যন্ত। ফলে জেলার সব কর্মকাণ্ড এখন সম্মেলনকে ঘিরে। সকল নেতাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় সমাবেশ কয়েকদিন পরে আয়োজন করতে চেয়েছিলেন নেতারা। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সমাবেশ পিছানোর কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না পাওয়ায় অবশেষে আজই জেলার সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক মহানগরীর বাইরে টুকেরবাজার এলাকায় এই সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সিলেটের নেতা হিসেবে দলের চেয়াপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নেতৃত্বেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশকে সফল করতে কয়েকদিন ধরে সিলেটে অবস্থান করে সব প্রস্তুতি চালাচ্ছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে কয়েক দফা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন। দৃশ্যমান বিষয় হচ্ছে- মূলত সিলেটের এই সমাবেশের আয়োজন হচ্ছে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে ঘিরে।
সিলেট বিএনপি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। কমিটি সহ বড় অংশ সহ একাংশের নেতা হচ্ছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। আর বঞ্চিত সহ অপর অংশের নেতা হচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। দু’জনই কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের রাজনীতি সিলেটকে ঘিরে। দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নিচ্ছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার সঙ্গে জেলা ও মহানগরের নেতাদের রয়েছে ভালো সম্পর্ক। কর্মী থেকে শুরু করে নেতা পর্যন্ত সবার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে এখন সিলেট বিএনপিকে এক হাতেই চালাচ্ছেন। এতে কিছুটা রুষ্ট মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি ইচ্ছা করলেও মূল নেতৃত্বে আসতে পারছেন না।
গত ৩০শে নভেম্বর সিলেটে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। এই আয়োজনেও মূল নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। পাল্টা হিসেবে গত ১৮ই ডিসেম্বর আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসে যোগ দিয়েছিলেন। আজকের সমাবেশের আয়োজন করছে সিলেট জেলা বিএনপি। সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- আজকের সমাবেশে সিলেটে অবস্থান করা সকল কেন্দ্রীয় নেতাদের পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল।
তবে- গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দাওয়াত পাননি। তার সঙ্গে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীও দাওয়াত পাননি। তারা জানান- বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সোমবার রাতেই বিএনপি’র জেলা আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার নিজে ফোন করে কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে দাওয়াত দেন। আর গতকাল দুপুরে তিনি দাওয়াত দেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এবং সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয় তাকে।
গতকাল বিকালে সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন- ‘জেলা বিএনপি’র সিদ্বান্ত হচ্ছে; আমরা সিলেটে অবস্থান করা সব কেন্দ্রীয় নেতাকে দাওয়াত দেবো। তাদের বিশেষ করে আমি নিজেই দাওয়াত দিচ্ছি। সৌজন্যতার খাতিরে অন্য কাউকে দিয়ে দাওয়াত দিচ্ছি না। গতকাল দুপুরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দাওয়াত দিয়েছি।’ তিনি জানান- ‘বিলম্ব দাওয়াত দেওয়ার কারণে তিনি একটু মনোক্ষুণ্ন্ন হয়েছেন। কিন্তু আমরা তো তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। তখন পাইনি। এছাড়া- উপজেলা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকা সশরীরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপরও মেয়র সাহেব উপস্থিত থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আমাদের কোনো নেতাকে এই দুঃসময়ে দূরে রেখে চলতে চাই না বলে মন্তব্য করেন জেলার আহ্বায়ক।’
মেয়র আরিফের অভিনন্দন: নবনির্বাচিত সিলেটের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ও জেলা মহিলা দল নেতৃবৃন্দকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী সদস্য, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এক অভিনন্দন বার্তায় মেয়র বলেন- ‘ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে দেশ মাতৃকা ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে আমাদের আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী এই অবৈধ সরকারের রোষানলে, ফরমায়েশি রায়ে বন্দি। আমাদের নেতা, আগামীর বাংলাদেশ তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমানকেও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে রেখেছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ এই সরকারের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডে বহির্বিশ্বে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ পেতে ও সংকট নিরসনে আগামীতে আন্দোলন-সংগ্রাম আসতে পারে। আমি আশা করি আগামীতে যেকোনো সংকটে এই নেতৃত্ব সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেবে। সিলেট জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এম. জহুরুল ইসলাম মখর স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএনপি’র সকল নেতৃবৃন্দ সহ নগরবাসীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।