সিলেটে জনমনে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে, ঝুঁকির কারণ প্রবাসীরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১৫:০৮,অপরাহ্ন ২১ মার্চ ২০২০
সুরমা নিউজ :
সিলেটে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশিরভাগ প্রবাসীদের খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। এতে জনমনে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সিলেটে বিদেশফেরতদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রশাসনও। অনেকে বলছেন বিদেশফেরতরাই এখন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিদেশফেরতরা ঠিকমতো সরকারি নির্দেশনা মানছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণে করতে ইতমধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত সাতটি টিম মাঠে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার পাঁচটি টিম নগরীতে অভিযান পরিচালনা করে। যেখানে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বেশিরভাগেরই দেখা পায়নি। জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ২৬ হাজার ৫০৩ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। অথচ বিভাগজুড়ে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ১ হাজার ৪৪৪ জন।
এ দিকে শনিবার (২১ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিছুর রহমান বলেন, সিলেটে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ২২৭ জন। এ নিয়ে বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনের মোট সংখ্যা ১৪৪৪ জনে পৌঁছেছে। কোয়ারেন্টিনে থাকা সকলেই প্রবাসী ও তাদের স্বজন বলে জানিয়েছেন তিনি। বিপুল সংখ্যক লোক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও এই ব্যবস্থা কতোটা কার্যকর তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে। হোম কোয়ারেন্টিনে যাদের রাখা হচ্ছে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না বলেও অভিযোগ ওঠছে। তবে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলছেন, হোম কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন তাদের ব্যাপারে প্রশাসন নজরদারি রাখছে। কেউ কোয়ারেন্টিনে না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সিলেটে অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রেখেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মাঝে এই ভয় বেশি কাজ করছে। এতে করে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের লক্ষণ ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কিংবা পরামর্শ নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয় সিলেটের সরকারি ছোট-বড় হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
এক রোগীর ভুক্তভোগী অভিভাবক জানিয়েছেন, বুকের ব্যাথা নিয়ে তিনি তাঁর স্বজনকে সিলেট নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে প্রথমে হাসপাতালের অভ্যর্থক পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অসহযোগিতা করেন। পরে একজন নার্স ওই রোগীর ইসিজি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকের অসহযোগিতা দেখে তিনি রোগীকে নিয়ে ওই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন। আরো কয়েকজন রোগী এবং তাদের স্বজনদের কাছ থেকেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, যেকোনো ধরনের রোগী এসব হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা প্রথমে কাছে আসতেই ইতস্তত করছেন। জ্বর, কাশি, সর্দি এসব লক্ষণ নেই নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসকরা রোগীর কাছে যাচ্ছেন।
একজন রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চাইছেন কোনো রোগীই যেন ভর্তি না থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবাই আতঙ্কিত। চিকিৎসকরাও এর বাইরে নন। আমরা সেবা নিতে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছি না সেটা ঠিক নয়, তবে সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে।
এদিকে সিলেট মহানগরীতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিয়ে কিংবা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুসা। তিনি জানান, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতা হিসেবে এই ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন দিনে সিলেট বিভাগে অন্তত পাঁচটি বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করেছে প্রশাসন।