সিলেটে অভিষেক খুনের ৯দিনেও আসামিরা অধরা, হতাশ পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ৫:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেট নগরের টিলাগড়ে ছাত্রলীগ কর্মী অভিষেক দে দ্বীপ (১৮)হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পেরোলেও আসামিরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে হতাশ নিহতের পরিবার। অতীত অভিজ্ঞতায় তাদের মনে নানা শঙ্কা দানা বাধছে।
আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের আন্তরিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কলেজ ছাত্র দীপের বাবা, সহপাঠি, রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
দ্বীপের বাবা দিপক দে বলেন, আমাদের একমাত্র সন্তানকে খুন হয়েছে। তাকে ফিরে পারোনা জানি, অন্তত; তার খুনীদের গ্রেফতার করা হোক। আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার চাই। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, আসামিদের খোঁজ মিলছে না, আমরা সাহায্য করতে? পুলিশ যদি খোঁজে না পায়, আমরা কি করে ধরিয়ে দেবো?
যে কারণে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিনি বলেন, ছেলের বিচার যাতে হয়, সে জন্য কর্মসূচী নিয়ে রাস্তায়ও নামবো।
তবে,শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম বলছেন, আসামি গ্রেফতারে পুলিশের আন্তরিকার কোনো ঘাটতি নেই। আসামিদের আটকে তাদের সম্ভাব্য সব আস্তানায় অভিযান চলছে। শিগগিরই তারা ধরা পড়বে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরের শাহপরান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শ্যামল ঘোষ বলেন, হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার মামলার প্রধান আসামিকে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ৭দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে রিমাণ্ডের শোনানীর দিন ধার্য্য হয়নি। কেননা,তার দেহে জখম থাকায় আপাতত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না।
এছাড়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওনিহতের বন্ধু শুভ কর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। পুলিশ তার জবানবন্দি রেকর্ডকরবে। তার ভূমিকা কি ছিল, তা যাচাই করবে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তথ্য প্রযুক্তিরব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
পূর্ব বিরোধের জের ধরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে টিলাগড়ের এমসি শিশু বিদ্যালয়ের সামনে হামলার শিকার হন অভিষেক দেদ্বীপ। এসময় ছাত্রলীগ কর্মী সমুদ্র রায় সৈকতের নেতৃত্বে তাকে কোপানো হয়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হামলায় গুরুতর আহত শুভ করকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের রাতেই গ্রেফতার হয় হামলায় নেততৃত্বদানকারী ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত।
নিহত অভিষেক গ্রিনহিল স্টেট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর হামলাকারী সৈকত সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্র। দু’জনই ছাত্রলীগের টিলাগড় ব্লকের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকারের অনুসারী।
কিন্তু এ ঘটনার পর গ্রুপেরনেতার নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার মৌনতা নেতাকর্মী থেকে নিহতের পরিবারকে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে।
এঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিহতের বাবা সাদিপুরের বাসিন্দা দীপক দে বাদি হয়ে শাহ পরাণ (রহ.) থানায় একটি হত্যা মামলা (১৫(০২)২০)দায়ের করেন।
টিলাগড়ের গোপালটিলার ২নং সড়কের সল্টু রায়ের ছেলে সমুদ্র রায় সৈকতকে (২২) প্রধান আসামি করে দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয় একই এলাকার ৩২নং বাসার সজল দের ছেলে সৌরভদে (২০), রতন দেবের ছেলে পূজল দেব (২৮) ও শংকর দে’র ছেলে সাগরদে (২০)। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয় আরও ৩/৪জনকে।
৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় দায়েরকৃত এ মামলায় হুকুমের আসামি করা হয় পূজল দেবকে। তার হুকুমে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে কিল, ঘুষি ও ছুরিকাঘাত করে একজনকে হত্যা ও আরেক জনকে জখমকরার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়-‘গত ৩০ জানুয়ারি স্বরস্বতি পূজার শোভাযাত্রার সময় অভিষেকের সঙ্গে আসামি সৈকতের কথাকাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তি হয়। ঘটনার দিন ৬ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভিষেক তার বন্ধু শুভ করকে নিয়ে টিলাগড়ে আজাদকাপ খেলা দেখার জন্য বাসা থেকে বের হয়। খেলা দেখারত অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামিরা অভিষেক ও শুভকে আজাদ কাপ টুর্নামেন্ট মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোনে ডেকে নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
এসময় আসামি পূজন দেবের হুকুমে অপর আসামি সৈকত অভিষেকের গলা ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে। আসামি সৌরভ ও সাগর সৈকতের হাত-পা চেপে ধরে অন্যান্য আসামি মিলে তাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারে। এসময় অভিষেককে প্রাণে বাঁচাতে তার বন্ধু শুভ এগিয়ে আসলে সৈকত তার বুকেও ছুরিকাঘাত করে।
আসামিরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন অভিষেক ও শুভকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিষেককে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় শুভকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’