ইউরোপ যাত্রায় ৫ বছরে দুই শতাধিক বাংলাদেশির মৃত্যু, অধিকাংশই সিলেটি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০১৯, ১০:৩৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ইউরোপ’ শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে উঠে উন্নত জীবন ব্যবস্থা, আর্থিক স্বচ্ছলতা থেকে শুরু করে জীবনযাপনের রঙ্গিন এক মোহবন্ধনের হাতছানি। কিন্তু বিষয়টি সত্যিই কি তেমন? ইউরোপে গিয়ে আর্থিক অবস্থার রূপান্তর হওয়া মানুষের সংখ্যা গণনার মত নয়। এর উপরে মিলছে না ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের ভিসা। বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় গত ৫ বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত) প্রায় দুই শতাধিক বাংলাদেশীর প্রাণ গেছে সাগরে ডুবে। এর মধ্যে অধিকাংশই সিলেটি।
ইউরোপ পাড়ি জমানোর চরম স্পৃহা থেকে বাংলাদেশীরা দাঁড়ান দালালদের দরজায়। তখনই দেশ ও বিদেশজুড়ে বিশাল দালাল চক্রগুলো সরল বাংলাদেশীদের রঙ্গিন দৃষ্টিকে আরও উষ্কে দিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। বিনীময়ে প্রবাসের স্বপ্নবাজরা পান নিরাপদ ও বৈধ প্রবাস জীবনের বিপরীতে অনিরাপদ, অবৈধ ও অনিশ্চিত প্রবাসজীবন। এর মধ্যে প্রায়শই ঘটে মর্মান্তিক মৃত্যু।
যিনি আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। পরিবার হয়তো ভেবেছিল তার টাকা দিয়ে রঙিন নতুন স্বপ্ন বুনবে, ঘুচবে অভাব। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে যে টাকা রোজগার করতে চেয়েছিলেন তিনি, সে টাকার কাছেই আটকে গেল তার জীবন। বলছি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামের ইমরান খানের কথা। ভয়ংকর পদ্ধতিতে সুদূর ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে মাঝপথে থেমে যায় তার যাত্রা।
গত বছরের ১৬ আগস্ট ৮৪জন যাত্রী নিয়ে অবৈধ পথে এক নৌকা নিয়ে যাত্রা করে ইউরোপ অভিমুখে। সমুদ্রেই অনাহারে কাটে পাচঁ পাঁচটা দিন। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় সকলেরই নাজেহাল অবস্থা। এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন। বিশাল পানিরাশির মধ্যে অদৃশ্য কূলের দিকে তাকিয়ে দিশেহারা আরোহীরা। ধুকে ধুকে অনেকেই এক সময় আশ্রয় নিলেন যমদূতের কোলে। পরে দিকহীনভাবে ভাসতে থাকা নৌ যাত্রীদের সাথে দেখা হয় মাল্টা কোস্ট গার্ডের। সকলকে উদ্ধার করে তারা নিয়ে যান শরণার্থী শিবিরে। আর মৃতদের নেওয়া হয় মাল্টা সরকারী মর্গে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর লক্ষাধিক বাংলাদেশী নাগরিক অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশ করতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে বা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্মুখিন হতে হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা।গত দুই দশকে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদনকারী ইটালিতে৷ এই সংখ্যা ৩২ হাজার ২৮৫ জন৷ এছাড়া ফ্রান্সে ৩১ হাজার ৪৩৭ জন, গ্রিসে ১৮ হাজার ২৩১ জন, হাঙ্গেরিতে ১০ হাজার ২৫৬ জন, জার্মানিতে ৭ হাজার ৩০১ জন, সাইপ্রাসে ৭ হাজার, অস্ট্রিয়াতে ৬ হাজার ৪১৭ জনসহ ইউরোপের নানা দেশে কম-বেশি আশ্রয় চেয়েছেন৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৬ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। এভাবে সাগরপথে আসতে গিয়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ প্রাণও হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছেন বাংলাদেশী। কিন্তু তবুও ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা থেমে নেই৷ প্রশ্ন হলো কবে থামবে? আর কত মানুষের প্রাণ গেলে হুঁশ ফিরবে আমাদের?