পুত্রের হাতে মার খাওয়া সেই মায়ের পাশে ইউএনও, পাকা ঘর বানিয়ে দেয়ার আশ্বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০১৯, ২:০১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মায়ের সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় পুত্রের হাতে মার খেয়ে আহত বৃদ্ধ মা ছুকেরা খাতুনকে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে আজ শনিবার বিকেলে তার বাড়িতে দেখতে গেলেন ইউএনও নজরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন পিআইও মো আসাদুজ্জামান ও এটুআই প্রকল্পের তাজুল ইসলাম জাবেদ।
পাখির বাসার মতো ছনবাঁশের নড়েবড়ে ঘরের অবস্থা দেখে তিনি আগামী একমাসের মধ্যে সেখানে জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় পাকা ঘর বানিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া ঘর উঠানোর পর সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দেবেন তিনি৷
এ সময় ছুকেরা বেগমকে নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আপনার কাছে একজন ইউএনও হিসেবে আসিনি। আমি একজন সন্তান হিসেবে এসেছি৷ আপনার যেকোনো সমস্যায় আপনি আমাকে পাশে পাবেন। এ সময় তিনি ওই বৃদ্ধা নারীর হাতে সুচিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা তুলে দেন।
নজরুল ইসলাম বলেন,‘এরকম একজন বয়স্ক বৃদ্ধা মাকে নিজের ছেলে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আহত করেছে এমন খবর শুনে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে উনাকে দেখেতে গিয়েছি। উনি কোনো সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আওতায় এসেছেন কি না সেটাও জানার দরকার ছিল। পরে যেটা জানলাম, তিনি বয়স্ক ভাতাপান। না পেলে ব্যবস্থা করতাম। আর তিনি যে ঘরে থাকেন সেটির অবস্থা হচ্ছে নড়বড়ে। তিনি আমাকে বলছেন,একটি ঘর করে দেওয়ার জন্য। আগামী একমাসের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পাকা ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো,যেহেতু জায়গাটা তার নামে আছে।’
তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন,‘ওই মহিলার ছেলে কত বড় পাষণ্ড! যেভাবে এই বয়সে তাকে মেরে আহত করেছে। সেটা না দেখলে বুঝতাম না।’
প্রকল্প কর্মকর্তা মো.আছাদুজ্জামান বলেন, ‘বৃদ্ধা ওই মহিলার ঘরটি ছনবাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি। খুবই নড়বড়ে অবস্থা। জমি আছে,ঘর নেই এই প্রকল্পের আওতায় এই ঘরটি আমরা তৈরি করে দেবো।’
এই গ্রামের বাসিন্দা মো.মকসুদ আলী বলেন,‘বৃদ্ধ এই মহিলার দুই ছেলে। তারা কেউ মাকে খাওয়ায় না। মানুষের সাহায্য নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। বাড়িটি তার মায়ের দেওয়া ১৫ শতক জমি রয়েছে। পাখির বাসার মতো ছনবাঁশের ঘর। নিষ্টুর ছেলের ঘরে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও মাকে বিদ্যুৎ নিতে দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, বর্তমানে ওই বৃদ্ধা মহিলা ছেলেকে জেলে পাঠিয়েও আতংকে আছেন। কারণ জেল থেকে বের হয়ে আবারো তাকে প্রাণে মারতে পারে সেই আশংকা নিয়ে রাতদিন কাটছে তার।
প্রসঙ্গত, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের গুলগাঁও গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা মাকে দিনের পর দিন মারধর করে আসছেন ছেলে জহুর আলী (৪৫)।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকালে বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলে বাধ্য হয়ে কাঁদতে কাঁদতে থানায় গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন ছুকেরা বেগমl
আহত ছুকেরা খাতুন জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে মারা গেছে। তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এই জমি বড় ছেলে জহুর আলীকে (৪৫) দিয়ে দেওয়ার জন্য বহুদিন ধরে চাপ দিচ্ছে। জমি না দেওয়ায় বহুবার আমাকে মেরেছে।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আবার ওই জমি তার নামে দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। এতে আমি অপারগতা প্রকাশ করায় সে একটি কাটা বাঁশ দিয়ে আমাকে মারে।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, গুলগাঁও গ্রামের আজগর আলীর স্ত্রী ৭০ বছরের বৃদ্ধা ছুকেরা খাতুন থানা অভিযোগ নিয়ে আসেন। তার হাতে মাথায় ও বুকে মারাত্মক আহতের চিহ্ন রয়েছে। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
এ দিকে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে এম নজরুল সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিন্দুর খান এলাকা থেকে সেই ছেলে জহুর আলীকে গ্রেপ্তার করে পরদিন শুক্রবার আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠান।
এর আগে বৃদ্ধা মা ছুকেরা বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলাও রুজু করেন।