বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে সুলতান মনসুরের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ মে ২০১৯, ১২:০৬ অপরাহ্ণ
শেখ মামুনূর রশীদ:
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে গণফোরাম। জোট এবং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
একই কারণে দলটির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মোকাব্বির খানকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি মোকাব্বির খানের শোকজ নোটিশটিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণফোরাম। দলের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ গণফোরামে ফিরবেন কিনা তা নিশ্চিত করেননি। জানতে চাইলে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তবে যেহেতু রাজনীতি করি, মানুষের সঙ্গে থাকি তাই নির্বাচনের আগে গণফোরামের হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নেই। কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। আমি তার বাইরে নেই। আবার তার দলেও যে আছি বা ফিরব এমনটাও নয়। আপাতত আমি আমার এলাকার মানুষকে নিয়ে আছি, তাদের জন্য কাজ করার কথা ভাবছি।’
অন্যদিকে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমি তো গণফোরামেই আছি। দলের বাইরে থাকার সুযোগ নেই, প্রশ্নও উঠে না’।
তিনি আরও বলেন, গণফোরামের প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে ভোট করে জয়ী হয়েছি। জনগণের কথা ভেবেই সংসদে যোগ দিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির সদস্যদের শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে। তাই এখন আর পেছনের বিষয় নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। সংসদে আমরা কিভাবে জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করব- এ পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
দল ও জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেয়ার কারণে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদকে ৭ মার্চই বহিষ্কার করে গণফোরাম। অন্যদিকে একই অপরাধে মোকাব্বির খানকে ২৪ এপ্রিল শোকজ করে দলটি। কিন্তু শপথ নেয়ার সময়সীমার মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যোগ দেয়ায় রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বদলে যায়। এ অবস্থায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। একইভাবে মোকাব্বির খানকে দেয়া শোকজ নোটিশটিও প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কথা ছিল কেউ শপথ নেবেন না। কিন্তু প্রথমে আমাদের দলের দু’জন, শেষ মুহূর্তে বিএনপির পাঁচজন নির্বাচিত সদস্য শপথ নেন। বিএনপির সদস্যদের শপথ নেয়ায় স্বভাবতই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। এ অবস্থায় আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের ফেরত নেব।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ছয়জন জয়ী হন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন গণফোরামের দু’জন। নির্বাচনের পরপরই ভোটে ব্যাপক অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানোর পাশাপাশি তারা শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ ৭ মার্চ শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। তাকে অনুসরণ করে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান শপথ নেন ২ এপ্রিল। এ দু’জনকে অনুসরণ করে ২৫ এপ্রিল শপথ নেন বিএনপির মো. জাহিদুর রহমান। শপথ গ্রহণের সময়সীমার শেষ দিনে এসে ২৯ এপ্রিল বিকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপির বাকি চার সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন।
বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সময়সীমার মধ্যে শপথ না নেয়ায় পরদিন ৩০ এপ্রিল তার সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সূত্র: যুগান্তর