সিলেটে ধর্মঘট : জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ৬:২৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
আমিনুল ইসলাম (২২) তাঁর অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে ডাক্তার দেথাতে নিয়ে যাবেন ঢাকায়।বাসের অপেক্ষায় সকাল থেকেই বসে আছেন দক্ষিণ সুরমার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। গোলাপগঞ্জ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় কোনো রকম টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছলেও ঢাকার বাস পাননি। ট্রেনে যাওয়ার চেষ্ঠা করলেও টিকিট না পাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে দাাঁড়িয়ে ঢাকায় যাওয়ার সাহস করেন নি তিনি। নিরুপায় হয়ে অবস্থান নিয়েছেন হুমায়ন রশিদ চত্বরের পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্টে। বিকেল ৩টায় রেস্টুরেন্টে বসেই গোলাপগঞ্জের বাদেপাশা থেকে আসা এই যুবক তাঁর দুর্দশার কথা জানালেন।
বললেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি তিনি জানতে না। তাই অসুস্থ পিতা আরব আলীকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে রওয়ানা দেন। নদী ও সড়কপথে ঢাকাদক্ষিণ পৌঁছার পর একটি অটোরিকশা ভাড়া করে কদমতলী বাস টার্মিনালে আসেন। এর পর পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি জানতে পারেন।’ পরিবহন কর্মবিরতির কারেণ শুধু আমিনুলই নন, তাঁর মতো অসংস্য নারী-পুরুষ ও শিশু দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং পরিক্ষার্থীদের নিয়ে কষ্টের একটি দিন পার করেন অভিভাবকরা।
এ কারণে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা ও রিকশায় শিক্ষাঙ্গণে আসা যাওয়া করতে হয়েছে তাদের। অনেক শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীকে হেঁটে কেন্দ্রে আসা যাওয়া করতে হয়েছে।
সরেজমিনে দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যস্ততম টার্মিনালে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কে তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। শুধু কিছু সময় পরপর দু-একটি রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করছে। টার্মিনালে পরিবহনশ্রমিকদেরও দেখা মেলেনি। কিছু সময় পরপর টার্মিনালে রিকশায় করে দু-একজন যাত্রী দেখা গেছে। তবে পরিবহন ধর্মঘটের কথা শুনে তাঁরা আবার ফিরে যাচ্ছেন।
বাস টার্মিনালে আসা মৌলভীবাজারের রাজীব দাশ বলেন, ‘সিলেটে জরুরি একটি কাজে রোববার এসেছিলাম। আজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টার্মিনালে এসে জানতে পারলাম ধর্মঘট। সড়কপথে যেকোনো সময় যানবাহন পাওয়া যায়। সে জন্য বাসেই যাতায়াত করি। তবে কয়েক দিন পরপর পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
যানবাহন চলাচল না করায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে অনেকেই গন্তব্যে যেতে পারেননি। এর ছাপ লক্ষ করা গেছে নগরীতেও। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোয় রিকশা, মোটরসাইকেল এবং কিছু প্রাইভেট কার ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়নি। নগরীর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে পায়ে হেঁটে বাসা-বাড়িতে ফিরতে দেখা গেছে।
পরিবহনশ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকেই সিলেট থেকে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। সে সঙ্গে সিলেটে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন প্রবেশ করেনি। তবে সিলেট রেলস্টেশন থেকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার কাজী শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সড়কপথে দূরপাল্লার যানবাহন না চলায় রেলপথে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেশি ছিল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজীব আলীর দাবি, পরিবহনশ্রমিকেরা সাত দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন। সকাল-সন্ধ্যা কর্মবিরতির পর দাবি আদায় না হলে পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি নেওয়া হবে।