আল্লামা গহরপুরীর শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
শায়খুল হাদিস আল্লামা নুর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ.) মৃত্যুর ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল আলেমে দীন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পারি জমান। উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদিসবিশারদ আল্লামা নুর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সুন্নতের পূর্ণ অনুসারী। একজন বড় আলেম ও আল্লাহর অলি হবেন- এটা তাঁর মায়ের একান্ত কামনা ছিল।
আল্লামা সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। মৃত্যুর সময়ও তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর সভাপতি ছিলেন। দেশ-বিদেশে তাঁর লক্ষাধিক শিষ্য কোরআন ও হাদিসের খেদমত করে যাচ্ছেন। তিনি ‘গহরপুরী হুজুর’ হিসেবেই প্রসিদ্ধ। শুধু কোরআনেরই হাফেজ ছিলেন না, একই সঙ্গে হাদিসশাস্ত্রের প্রধান ছয়টি কিতাব যা ‘সিহাহ সিত্তাহ’ বলে পরিচিত-প্রত্যেকটির তিনি হাফেজ ছিলেন। এ কারণেই তাঁকে হাফেজে কোরআন এবং হাফেজে হাদিসও বলা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র শায়খুল হাদিস, যাঁর সিহাহ সিত্তাহ মুখস্থ ছিল। এমন গৌরবময় কৃতিত্ব ও অসাধারণ মেধার পাশাপাশি আল্লাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ সদা বিনয়ী ও নিভৃতচারী মহান এই আলেমের শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তিনি একটানা অর্ধশতকেরও বেশি সময় পবিত্র হাদিসের দরস দিয়েছেন।
১৯৭০ সালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। ১৯২৪ সালে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মাওলানা জহুর উদ্দীন আহমদও বরেণ্য ও বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। মা ছুরতুন্নেসা ছিলেন পরহেজগার আদর্শ গৃহিণী। শৈশবে তাঁর পিতার ইন্তেকাল হওয়ায় তিনি শায়খে বাঘা (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন ও বেড়ে ওঠেন। ১৯৫০ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে টাইটেল পরীক্ষার মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেন। মাওলানা হাবিবুর রহমান রায়পুরী (রহ.)-এর পক্ষ থেকে তিনি খেলাফত অর্জন করেন। ১৯৫৭ সালে হজরত মাদানি (রহ.)-এর নির্দেশে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া ওরফে গহরপুর মাদ্রাসা।
সৈয়দপুর দারুল হাদিস মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ আবদুল খালিক শায়খে সৈয়দপুরী (রহ.)-এর কন্যা সৈয়দা খালিদা খাতুন তাঁর স্ত্রী। শায়খে গহরপুরী ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ করতেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক শায়খুল ইসলাম মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-কেই আদর্শ হিসেবে মানতেন। বুজুর্গ আলেমদের বিষয়ে বলা হয়, ‘মওতুল আলেমে মওতুল আলম-সাধক আলেমের মৃত্যু পৃথিবীর মৃত্যুতুল্য।’ এই মন্তব্যটি আক্ষরিক অর্থেই হজরত শায়খে গহরপুরীর ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য। তিনি এখন আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর শূন্যতা পূরণ হবেনা।