ছাতকে বখাটেদের ভয়ে একই পরিবারের পাঁচ কন্যার কলেজ ও মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের ছাতকে দোলারবাজার ইউনিয়নের বারগোপী গ্রামের কিছু বখাটেদের ভয়ে একই পরিবারের পাঁচ কন্যা কলেজ ও মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
কলেজে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবিসংবলিত বেনামে নানা ফেক আইডি তৈরি করে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য অপপ্রচার করায় কলেজপড়ুয়া বড় বোনের সঙ্গে অন্য ছোট চার বোনেরও ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে নেমে আসছে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে আসামিরা মামলার বাদীসহ তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে ক্ষান্ত হয়নি। উল্টো বাদীকে হত্যা ও কলেজপড়ুয়া কন্যার মুখমণ্ডলের চেহারা বিকৃতি করার হুমকি দিয়ে আসছে বখাটেরা।
এতে কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র এবং স্ত্রীকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন মামলার বাদী উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের বারগোপী গ্রামের মৃত জমশেদ আলীর পুত্র দরিদ্র আকবর আলী।
জানা গেছে, মামলাসংক্রান্তের জের ধরে গত ১৪ এপ্রিল বিকালে বাড়িতে ঢুকে গৃহকর্তা আকবর আলীকে মারধর করে আহত করে বারগোপী গ্রামের তাহির আলীর পুত্র ইমাদ, নুর উদ্দিন ও মাসুম আহমদ, মৃত আবদুল হকের পুত্র কামাল। আকবর আলীকে হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে আহত হন তারই কলেজপড়ুয়া কন্যা তাজমিন বেগম।
এ সময় স্ত্রী আলেয়া বেগমকেও টানাহেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায় হামলাকারীরা। ছিনিয়ে নেয় আট আনা ওজনের কানের দুলও। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আহত আকবর আলী ও তার কন্যাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্ত্রী আলেয়াকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনায় গৃহকর্তা আকবর আলী বাদী হয়ে বারগোপী গ্রামের ইমাদ, নুর উদ্দিন ও মাসুম আহমদ, কামালের নাম উল্লেখ করে ১৬ এপ্রিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পর দিন পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ছাতক থানাধীন জাহিদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবদুল মুতালিব।
এ বিষয়ে ছাতক থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দরিদ্র আকবর আলী জানান, তিনি পাঁচ কন্যা ও এক পুত্রসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হামলাকারীদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। বড় কন্যা গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি অনার্স কলেজে, দ্বিতীয় কন্যা সিলেট মদন মোহন কলেজে, তৃতীয় কন্যা মঈনপুর জনতা ডিগ্রি কলেজে, চতুর্থ কন্যা দোলারবাজার দাখিল মাদ্রাসায়, পঞ্চম কন্যা শনিষপুর আল ইখওয়ান বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় ও একমাত্র পুত্র লেখাপড়া করছে স্থানীয় বারগোপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
তিনি জানান, কৃষিকাজ করার পাশাপাশি গৃহপালিত পশু মোটাতাজা করে বিক্রির টাকাসহ প্রবাসী আত্মীয় স্বজনের আর্থিক সহযোগিতায় ছেলে মেয়েদের কোনোমতে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে হামলাকারী বখাটেদের ভয়ে তার কন্যারা কলেজ ও মাদ্রাসায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছে না।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি গোবিন্দগঞ্জ কলেজে অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া কন্যা তাজমিন বেগমের ছবি দিয়ে সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে আকবর বাবা, সোনা পাখি, আমি বড় একা ইত্যাদি একাধিক বেনামী ফেক আইডি তৈরি করে। এছাড়া লিফলেট বিতরণ করে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল বারগোপী গ্রামের সোহেল, কামাল, মাসুম আহমদসহ তার অন্যান্য সহযোগীরা।
এ ঘটনায় গত বছরের ৬ জুন থানায় উত্ত্যক্ত ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে কর্তৃপক্ষ যথাযত প্রতিকার গ্রহণ না করায় ১২ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ১৪ জুন সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরে পৃথক দুটি আবেদন করেন। এতেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ফলে অপপ্রচারকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তার কলেজপড়ুয়া কন্যাকে কলেজে যাওয়ার পথে রাস্তায় প্রকাশ্যে উত্ত্যক্ত করে টানাহেঁচড়া করে।
এ বিষয় নিয়ে ১১ জুলাই থানায় মামলা করতে গেলে কর্তৃপক্ষ আদালতে আশ্রয় গ্রহণের পরামর্শ দেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মৃত তেরাব আলীর পুত্র সোহেলকে গ্রেফতার করলেও অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার না করে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী।
সুত্র যুগান্তর