‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ : শুধু সিলেটের নয়, পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ শুধু সিলেটের নয় পুরো বাংলাদেশের ঐতিহ্য এর সঙ্গে জড়িত। এর স্থাপত্যরীতি একটু ভিন্ন। রয়েছে এর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তের কারণে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ সংরক্ষণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই মহামূল্য সম্পদকে একটা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে নাম মাত্রমূল্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখ জনক।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনী মিলনায়তনে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিললের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে (আবু সিনা ছাত্রাবাস) ভবনটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণাপত্রের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৌশিক সাহা। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট (আইএবি)’র সাবেক সভাপতি, আবু সাঈদ এম আহমেদ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য সাবেক সভাপতি সিএম তোফায়েল সামী, সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের মূখপাত্র ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষক ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক, আবদুল করিম কিম প্রমুখ।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি ধ্বংস না করেও সরকার অন্য স্থানে হাসপাতাল করতে পারে। তিনি সিলেটের এই অমূল্য সম্পদসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সাংবাদিকদের বেশি বেশি প্রচারের জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ প্রকল্প বাতিল করলে টাকা চলে যাবে। এটা একটা নিছক অজুহাত। তাদের মনে রাখা দরকার, টাকা ফেরত গেলে টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু ঐতিহ্য ধ্বংস হলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই টাকাকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। সরকার ইচ্ছা করলেই এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে রক্ষা করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক কৌশিক সাহা বলেন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়নের একটা বাধা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের পথে ঐতিহ্য বড় বাধা নয়। তাদের চিন্তা চেতনায় সমস্যা। তিনি আরও বলেন, এই ভবনটি ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এই ভবনটি অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী, এখানে শহীদ ডা. শামসুদ্দীন আহমেদসহ আরও অনেককে ১৯৭১ সালে এই ভবনে হত্যা করা হয়।
আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, একটা পরিবার যেমন অন্যের চেপে দেওয়া নকশায় নিজের ভবনের পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না, ঠিক তেমনি সিলেটবাসী তাদের এই ঐহিত্যকে ধ্বংস হতে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, এটা ভেঙে নতুন ভবন তৈরি না করে বরং এটাকে সংরক্ষণ করে এটাকে হাসপাতালের ছাত্রাবাস বা অন্যকোন কাজে ব্যবহার করলে এটা যেমন সংরক্ষিত থাকবে অন্যদিকে খরচ বেচে যাবে। আমি একজন স্থপতি হিসেবে যদি এ ঐতিহ্য ধ্বংস হয় তা হলে আমার পক্ষে যেমন মেনে নেয়া অসম্ভব তেমনি সিলেটবাসীর পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
ডা. মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ এটাকে ধ্বংস না কারে এটাকে সংরক্ষণ করুন।
সি এম তোফায়েল সামী বলেন, কোন দেশের কালচারকে ধ্বংস করা যাবে না।
শরীফ জামিল যথাযথভাবে এই অমূল্য সম্পদ রক্ষা করার দাবিসহ আবু সিনা ছাত্রাবাসকে প্রত্নতাত্তিক ঐতিহ্যের তালিকা ভূক্তির দাবি জানান।